আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়াও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান অন্যতম।
জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১টি দেশে বন্যার বিপদ বাড়ছে। আগামী দিনে এই দেশগুলোতে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসও বাড়বে। ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বেশির ভাগই দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় দাবদাহ থেকে দাবানল এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তুষার ঝড় বেড়েছে।
গতকাল সোমবার জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিস্তৃত ও গভীর হচ্ছে। এর ফলে এমন সব বিপদ ও দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে, যা গত দুই হাজার বছরেও বিশ্ববাসী দেখেনি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পবিপ্লবের পর বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর ফলে ভারত মহাসাগর বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ফলে মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে। যে কারণে বিশ্বের প্রধান নদী অববাহিকাগুলো এবং এর তীরবর্তী দেশ ও শহরগুলোতে বাড়ছে বন্যা।
বিশ্বের ৬৬টি দেশের ১৩৪ জন বিজ্ঞানী ওই প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করেছেন। এর মধ্যে ১৬৭ জন ছিলেন প্রধান লেখক। বিজ্ঞানীদের তালিকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম রয়েছেন। বিশ্বের মোট ১৪ হাজার গবেষণা প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে তাঁরা যৌথভাবে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেন।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগের আঘাত ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দেশের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকা উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ ধরনের দুর্যোগ বেশি আঘাত হানছে। এই বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সামনের দিনগুলোর পরিকল্পনা নিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো যেভাবে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে তাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তো দূরের কথা, দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেও সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুতে যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তার প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষ। এই পরিবর্তনে প্রকৃতির ভূমিকা খুবই কম। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট বিপর্যয়কর অবস্থা এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে বড় উদ্যোগ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য হচ্ছে, আমাদের হাতে আর সময় নেই। যেভাবে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে তাতে এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যেতে পারে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী বন্যার ঝুঁকিতে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এসব দেশে আগের চেয়ে বৃষ্টিপাত বেড়েছে, সামনে আরও বাড়বে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিসের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশে দাবানল ও ঘূর্ণিঝড় বেড়ে গেছে। তাই বিশ্বকে একত্র হয়ে এই বিপদ থেকে রক্ষায় কাজ করতে হবে।