কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বন্যায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ পানিবাহিত নানা রোগ হয়।
বন্যার পরে পানিবাহিত যেসব রোগ দেখা দিতে পারে, এ ব্যাপারে বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেলের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক কাওসার আহমেদ বলেন, ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। খাবারের মাধ্যমে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। বন্যার সময় দূষিত পানি পান করলেও ডায়রিয়া হতে পারে। তবে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করাও সহজ। সচেতন থাকলে ডায়রিয়া বা এ ধরনের পানিবাহিত রোগ এড়ানো সম্ভব।
পানির কারণেই ডায়রিয়া রোগ হয় বলে আগে থেকেই বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে রাখা উচিত বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, এতে দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে এই পানি ব্যবহার করা যাবে। পানি সংগ্রহ করা না গেলে বিশুদ্ধ করার উপকরণ যেমন—বিশুদ্ধকরণ বড়ি, পানি ফোটানোর জন্য জ্বালানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া সাবান, পরিষ্কার পানির পাত্র ইত্যাদিও সংগ্রহ করতে হবে। রোগাক্রান্ত হলে যাতে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে যাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
চিকিৎসক কাওসার আহমেদ বলেন, বন্যার সময় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া কঠিন। টিউবওয়েলের পানি পাওয়া না গেলে বিভিন্ন জলাশয়ের পানি ফুটিয়ে পান ও ব্যবহার করা যেতে পারে। জলাশয়ের পানি ১০ মিনিট ফুটিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে এর বেশির ভাগ জীবাণু মরে যায়। পানি ফোটানোর পর ঠান্ডা করে কিছুক্ষণ রেখে দিলে জীবাণু নিচের তলানিতে পড়ে যায়। তলানি ফেলে দিয়ে ওপরের পানি ব্যবহার করা যাবে। তবে প্রতিকূল পরিবেশ ও অন্যান্য কিছু কারণে সব জায়গার পানি ফোটানো সম্ভব হয় না। সেসব জায়গায় পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে মানুষের শরীর থেকে লবণ ও পানি দ্রুত বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে যে পরিমাণ পানি বেরিয়ে যায়, তা যদি দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয়, মানুষ তখনই অসুস্থ হয়ে পড়ে। শরীরে লবণ-পানির ঘাটতি দেখা দিলে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে খাবার স্যালাইন, ভাতের মাড় বা অন্য বিশুদ্ধ পানীয় পান করাতে হবে।
রোগীকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাসায় বা হাসপাতাল যেখানেই চিকিৎসা নেন, সে জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিদিন খাবারের আগে ও টয়লেট থেকে ফেরার পর সাবান দিয়ে দুই হাত ভালো করে ধুতে হবে। সাবান না থাকলে ছাই, মাটি বা প্রচুর পরিমাণ পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। এ সময় ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগবালাই হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যাতে কোনো প্রাণ হারিয়ে না যায়, সেটাই লক্ষ রাখতে হবে।
কাওসার আহমেদ বলেন, বন্যার পানি বাড়িঘরে ওঠার পর এবং পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত নানা রোগ যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, পেটের পীড়া, কৃমির সংক্রমণ, চর্মরোগ প্রভৃতি দেখা দেয়। এ জন্য বন্যায় আক্রান্ত মানুষের স্বাস্থ্য সচেতন থাকা খুবই প্রয়োজন। পানি ফুটানো ছাড়াও ফিটকিরি অথবা ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে নেওয়া যেতে পারে।
ডায়রিয়া হলেও প্রতিষেধকের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বন্যার সময় খাবার স্যালাইনের সংকট দেখা দেয়। এ জন্য আগে থেকেই খাবার স্যালাইন সংগ্রহ করে রাখা ভালো। খাবার স্যালাইন না থাকলে বিকল্প হিসেবে বাড়িতে প্রস্তুত লবণ-গুড়ের তৈরি স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে স্যালাইনের পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, গুড়ের শরবত দেওয়া যেতে পারে।
শিশুর যাতে পুষ্টিহীনতা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বন্যার সময় মলমূত্র ত্যাগে সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি বিষয়।
বন্যায় সাধারণত বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে যাওয়া, সাপ ও পোকামাকড়ের কামড়ের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। পানিতে ডুবে যাওয়া ও সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের প্রতি বাড়তি নজর রাখতে হবে। এ সময় শিশুদের চোখের আড়াল করা যাবে না।
নাজিয়া হোসেন: প্রথম আলোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক