কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মার চরের কাশবনে পুরুষ কালোমাথা বঘেরি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মার চরের কাশবনে পুরুষ কালোমাথা বঘেরি

পরিযায়ী পাখি

বনফুলের সোনা পাখি

পক্ষী আলোকচিত্রী এহসান আলী বিশ্বাস এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ফারুক আহমদের আমন্ত্রণে পাবনা গেলাম। কুষ্টিয়ার কুমারখালীসংলগ্ন পদ্মা নদীর চর পাবনা শহরের কাছেই। কাজেই শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার আগে সকালে দু-তিন ঘণ্টা পদ্মার চরে পাখি খোঁজার সিদ্ধান্ত নিলাম। সম্প্রতি সেখানে একটি বিরল প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে প্রথম আলোর পাবনার ফটো সাংবাদিক হাসান মাহমুদ ও স্থানীয় দুজন শিক্ষকসহ পাঁচজনের দল শহর থেকে মোটরসাইকেলযোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ঘাটের দিকে ছুটলাম। পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতী নদী পার হয়ে শিলাইদহ ঘাটে পৌঁছে গেলাম মাত্র ২৫ মিনিটে। এরপর বক্কর মাঝির নৌকায় নদী পার হয়ে চরে পৌঁছাতে লাগল মাত্র ৮ মিনিট।

নৌকা থেকে নেমে মিনিট তিনেক হাঁটার পর চরের এক প্রান্তে শুকনা কাশবনের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কাশবনের বেশির ভাগটাই ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়ে গেছে; বাকিটুকুও নিশ্চয়ই হয়ে যাবে অল্প কয়েক দিনে! যাহোক, কাশবনে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফারুক বলল, ‘স্যার, সামনে দেখেন।’ ওর নির্দেশিত দিকে তাকিয়ে দেখি, স্ত্রী চড়ুইয়ের মতো দেখতে একটি পাখি বসে আছে। এক মুহূর্ত দেরি না করে দ্রুত ক্লিক করলাম। এত তাড়াতাড়ি ওকে পেয়ে যাব, ভাবতেও পারিনি। তবে অতিসহজে স্ত্রী পাখিটি পেলেও কালোমাথা ও লালচে পিঠের হলুদ রঙের অনিন্দ্যসুন্দর পুরুষ পাখিটির জন্য আরও ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। এরপর ঘণ্টা দেড়েক চরে ঘোরাঘুরি করে বেশ কিছু ভালো ছবি তুলে বক্কর মাঝির নৌকায় ফিরতি পথ ধরলাম।

কুষ্টিয়ার পদ্মার চরে দেখা পাখিজোড়া এদেশের বিরল ও অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি কালোমাথা বঘেরি। কথাসাহিত্যিক বনফুল অর্থাৎ বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওটির নাম দিয়েছিলেন ‘সোনা পাখি’। ইংরেজি নাম ব্ল্যাকহেডেড বান্টিং। গোত্র Emberizidae ও বৈজ্ঞানিক নাম Emberiza melanocephala। রাশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও ইরানের আবাসিক পাখিটি শীতে ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পরিযায়ন করে।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মার চরের কাশবনে স্ত্রী কালোমাথা বঘেরি

একনজরে কালোমাথা বঘেরি চড়ুইয়ের মতো দেখতে হলদে দেহের সরু ও লম্বা চেরালেজি পাখি। লম্বায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার ও ওজন ২৭-৩৫ গ্রাম। দেহের নিচের পালক উজ্জ্বল হলুদ। বুকের দুই পাশ খানিকটা লালচে। মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের দুই পাশ থেকে গাল পর্যন্ত কালো। দেহের ওপরটা লালচে-বাদামি। পিঠ ও কোমর লালচে। ডানার ওপর দুটি সাদা ডোরা রয়েছে। প্রজননকাল ছাড়া অন্য সময় দেহের রং নিষ্প্রভ। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী বেশ সাদামাটা। দেহের ওপরটা গাঢ় দাগ-ছোপসহ বাদামি ও নিচটা ফ্যাকাশে হলুদ। দেহের দুই পাশ ফ্যাকাশে-বাদামি। কোমর ও লেজের নিচটা হলুদ। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে চোখ গাঢ় বাদামি। ওপরের চঞ্চু শিং-বাদামি ও নিচেরটা শিং-হলুদাভ। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল মাংস রঙা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে অনেকটা স্ত্রী পাখির মতো।