ফুলের নাম পিউম

পিউম ফুল, হাওর থেকে সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো
পিউম ফুল, হাওর থেকে সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো

এখন হাওরের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে শুধুই বিস্তীর্ণ সবুজ ধানখেত। হাওর এলাকায় নানা রকম বৃক্ষ রয়েছে, যাদের অধিকাংশই জল সহনীয় উদ্ভিদ। যেমন হিজল, করচ, বরুণ, বিয়াস, মেরা, ধুপ, কাঁটা মান্দার ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন প্রজাতির গুল্ম ও বীরুৎ-জাতীয় উদ্ভিদ।

এই মুহূর্তে পুরো হাওর ছেয়ে গেছে পিউম ফুলের সৌন্দর্যে। হাওরের পতিত জমি, কান্দা, নদীর পাড়, সড়ক ও বাঁধের পাশে রঙের পসরা নিয়ে ফুটে আছে এ ফুল। অনেক গাছ ঝোপ আকারে বেড়ে ওঠায় অনেক দূর থেকে ফুলের উজ্জ্বল বর্ণ দেখা যায়।

পিউম দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ। আদি আবাস আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে এবং দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিল। বর্ণিল সৌন্দর্যের জন্য উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এ উদ্ভিদ। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকার জেলায় জেলায়। মূলত শুকনো মৌসুমে চারা গজায় এবং মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে। হাওরে পুরো বর্ষার জল আসার আগেই ফলের বীজ পরিপক্ব হয়ে ভূমিতে পড়ে। সে বীজ জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

পিউম একবর্ষজীবী দ্রুতবর্ধনশীল বীরুৎ এবং তিন-ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। কাণ্ড সবুজ, কাঁটাযুক্ত ও ঝোপালো। পাতা যৌগিক এবং পত্রফলক পাঁচ থেকে সাতটি, চারদিকে সন্নিবেশিত থাকে। শাখার আগায় লম্বা মঞ্জরিতে ফুল ধরে। ফুল বেগুনি-গোলাপি অথবা সাদা। প্রতিটি ফুলের পাঁচটি পাপড়ি এবং ছয়টি লম্বা পুংকেশর থাকে। বসন্তের শেষ থেকে প্রাক্‌-শরৎ পর্যন্ত ফুল ধরে। প্রজাপতি এ ফুলের মধু পান করতে আসে। ঢাকা শহরের ফুলের বাগানেও মাঝে মাঝে পিউম দেখা যায়। হাওর এলাকায় এটির কোনো স্থানীয় নাম পাওয়া যায়নি। তবে শেরপুর এলাকায় এ ফুলকে পিউম বলে। কোথাও হুড়হুড়ি ও ঝরনা ফুল নামেও পরিচিত। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Cleome hassleriana, পরিবার Cleomaceae। ইংরেজি নাম Spider flower, Pink queen।

পিউম আর্দ্র পতিত জমি, হাওরের কান্দা, বাড়িঘরের আশপাশে এবং ছোট-বড় সড়কের পাশে ব্যাপক জন্মায় এবং প্রকৃতিতে ফুলের উজ্জ্বলতা ছড়ায়।