পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলের প্রধান দেবাশীষ রায়। মানবাধিকার, পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, বন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে তিনি কাজ করেন। ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের আদিবাসী ফোরামের স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য। বন দিবস উপলক্ষে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, বন ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ।
বাংলাদেশের বন আইন সেকেলে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের বন আইনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা ক্রমে প্রতিবেশমুখী বন আইনের দিকে এগোচ্ছে।
বাংলাদেশের বননীতি ক্রমে প্রতিবেশমুখী ও জনমুখী হচ্ছে।
বন আইন ক্রমে প্রতিবেশ ও স্থানীয় জনগণের বিপক্ষে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমির ধরন আলাদা। এখানে বন উজাড় হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বন উজাড়ের কারণ কী?
দেবাশীষ রায়: আজ থেকে শত বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম এ রকম ছিল না। পাহাড়িরা বনের মধ্যে বসবাস করত, তাদের জীবিকাও বননির্ভর ছিল। তারা বন রক্ষা করে জীবিকা ও জীবন চালাত। এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি এবং বন প্রশাসনিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৪ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর বিএনপি সরকারের আমলে নব্বইয়ের দশকে নতুন কিছু এলাকাকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে কিছু এলাকার মালিকানার বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ছিল। ১ লাখ ২০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে অর্ধেক এলাকা সংরক্ষিত বন। সংরক্ষিত বন নিয়ন্ত্রণ করে বন বিভাগ। সেখানে জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কোনো হাত নেই।
প্রথম আলো: ব্রিটিশ শাসনামলে বন ব্যবস্থাপনা কেমন ছিল?
দেবাশীষ রায়: ব্রিটিশ শাসনামলে বন রক্ষার বিষয়টি অন্য রকম ছিল। তখন বন বিভাগ ছাড়া এখানে আর কেউ ছিল না। বনকর্মীরা কাঁধে বন্দুক নিয়ে আর বন মামলা দিয়ে বনভূমি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করত। এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। পাহাড়ি ও বাঙালি উভয়ে সংরক্ষিত বনের মধ্যে বসবাস করছে। বেশ কয়েকটি পার্বত্য এলাকাকে সংরক্ষিত বনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি–বেসরকারি নানা স্থাপনা ও বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। বেশির ভাগ সরকারি সংস্থার সেখানে কার্যালয় আছে। ফলে বন রক্ষা এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আগের মতো আর নেই।
প্রথম আলো: আপনি তো সরকারের ভেতরে ও বাইরে থেকে বনের বিষয়টি দেখেছেন।
দেবাশীষ রায়: আমি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ছিলাম। এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমি চাকমা সার্কেলের প্রধান হিসেবে বন আইন নিয়ে মতামত দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর অনুরোধে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের বন রক্ষা বিষয়ে মতামত দিয়েছি। এসব মতামত দিতে গিয়ে আর আইন নিয়ে নাড়াচাড়ার কারণে আমার এখানকার বনভূমি নিয়ে কিছুটা ধারণা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, আমাদের বন আইন খুবই সেকেলে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের বন আইনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তারা ক্রমে প্রতিবেশমুখী বন আইনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই পুরোনো পথে হাঁটছি। আমাদের বননীতি ও আইনের মধ্যে আকাশ–পাতাল তফাত। আমাদের বননীতি ক্রমে প্রতিবেশমুখী ও জনমুখী হচ্ছে। আর বন আইন ক্রমে প্রতিবেশ ও স্থানীয় জনগণের বিপক্ষে যাচ্ছে।
প্রথম আলো: বিষয়টি পরিষ্কার করে বলবেন?
দেবাশীষ রায়: আমাদের বননীতিতে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ এবং প্রতিবেশব্যবস্থাকে রক্ষা করার কথা বলা আছে। কিন্তু বন আইনের মধ্যে মামলা ও আইনি ব্যবস্থার দিকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এটা এখন পরিষ্কার, বন বিভাগ একলা দেশের বন রক্ষা করতে পারবে না। তারা কাঁধে রাইফেল নিয়ে বন পাহারা দেবে আর স্থানীয়দের বিরুদ্ধে খালি মামলা দেবে। এটা হতে পারে না। তারা শারীরিক প্রতিবন্ধী এমনকি মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধেও বন আইনে মামলা দিয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে বন রক্ষা হতে পারে না। বন রক্ষা করতে হলে
স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে করে এগোতে হবে। মামলা দিয়ে যদি বন রক্ষা হতো, তাহলে যেখানে বেশি মামলা, সেখানে বেশি বন রক্ষা পেত। বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো।
প্রথম আলো: বন বিভাগ স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বন সৃজনের জন্য সামাজিক বনায়ন করছে?
দেবাশীষ রায়: আমরা স্থানীয়দের মতামত নিয়ে এবং গবেষণা করে দেখেছি, এ উদ্যোগ বন রক্ষা করতে পারবে না। সামাজিক বনায়ন পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এতে আরও বন ধ্বংস হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিমসহ আমরা গবেষণা করে দেখেছি, সামাজিক বনায়ন দিয়ে পাহাড়ের বন রক্ষা হবে না।
প্রথম আলো: সংরক্ষিত বনের বাইরের বনভূমিগুলোতে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেগুলো কেমন আছে?
দেবাশীষ রায়: পাহাড়ের দুই–তৃতীয়াংশ এলাকা সংরক্ষিত বনের আওতার বাইরে রয়েছে। সেগুলোতে কয়েকটি স্তরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে পরিচালিত হয়। ওই বনের গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বন বিভাগ থেকে শুধু অনুমোদন নিতে হয়। এর বাইরে বনের ওই অংশে বন বিভাগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব বনভূমি এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর হেডম্যান আছে। তাদের ওপরে জেলা পরিষদের ও সার্কেলপ্রধানদের নিয়ন্ত্রণ আছে। তাঁরা স্থানীয় জনগণেরও প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁরা অনেকটা বন বিভাগের উপ–বনসংরক্ষকের (ডিএফও) মতো ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের পরের স্তরে রয়েছে কারবারি।
বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে দুই ধরনের জমি আছে। একটি হলো ভিলেজ কমন ফরেস্ট, যাকে আমরা মৌজা বন বলি। স্থানীয় লোকজন অনেক আগে থেকে এসব বনে কৃষিকাজ, জুমচাষ ও কাঠগাছ রোপণ করেন। এগুলো তাঁরা বাজারে বিক্রি করতে পারেন। আরেক ধরনের বন হচ্ছে অশ্রেণিভুক্ত বনভূমি। ওই বনভূমিগুলো জেলা প্রশাসন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মৌজার মধ্যে যে বন এলাকা আছে, তা দেখার দায়িত্ব হেডম্যানের। এসব জমি জুমের আওতার বাইরে রাখা হয়। অর্থাৎ সেখানে বনভূমি রক্ষার একটি সামাজিক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রথম আলো: পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমির কোনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ আছে, সীমানা নির্ধারিত হয়েছে?
দেবাশীষ রায়: দুঃখজনকভাবে তা এখনো হয়নি। বন বিভাগসহ সরকারি কোনো সংস্থাই জানে না কোন জমিটা কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। কোনটা সংরক্ষিত আর কোনটা অশ্রেণিভুক্ত বন, তা এখনো বেশির ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা জানে না। কারণ, তাদের কাছে এসব বনের কোনো মানচিত্র ও সীমানা চিহ্নিত করে মৌজা ভাগ করা নেই। একমাত্র হেডম্যানরা এগুলো জানে। ফলে বন বিভাগ এবং জেলা প্রশাসন থেকে যখন জোতের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন হেডম্যান জমির ধরন চিহ্নিত করে দেয়। তারা ঐতিহ্যগত এবং উত্তরাধিকারসূত্রে এখানকার বন, পাহাড় এবং গাছের বিষয়ে জ্ঞান রাখে। যে কারণে তাদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রথম আলো: জোতের জমি ও মৌজা বনের মধ্যে সেগুনগাছ রোপণ বেশি হচ্ছে। অনেকে ফলবাগান করছে। এগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবিকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এতে বন কতটুকু রক্ষা পাচ্ছে?
দেবাশীষ রায়: এটা অবশ্য মৌলিক প্রশ্ন ও সমস্যা। কারণ, পাহাড়িদের মধ্যেও জীবিকার জন্য এসব জমিতে সেগুনগাছ লাগানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ব্রিটিশ শাসনামলে মিয়ানমার থেকে আনা এসব সেগুনগাছ দ্রুত বাড়ে এবং কাঠের বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু পাহাড়ের জমির জন্য তা মারাত্মক ক্ষতিকর। সেগুনের নিচে অন্য কোনো লতাগুল্ম বড় হতে পারে না। কারণ, সেগুনগাছের পাতা বেশ বড়। এগুলো মাটিতে ঝরে পড়ার পর সেখানে অন্য লতাগুল্ম বা ছোট গাছ জন্মানোর জন্য পর্যাপ্ত আলো–বাতাস পায় না। ফলে বর্ষা শুরু হলে সেগুনগাছের নিচের মাটি দ্রুত ক্ষয় হয় ও স্রোতে ভেঙে পড়ে। লতাগুল্ম থাকলে তা মাটিকে ধরে রাখত। ফলে সেগুনবাগান পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
প্রথম আলো: পাহাড়ে এখন প্রচুর আম, লিচু, কলার বাগান গড়ে উঠছে।
দেবাশীষ রায়: পাহাড়ে যেকোনো একটি এলাকায় একক ফসল বা উদ্ভিদের বাগান গড়ে ওঠা ক্ষতিকর। একসময় রবারবাগান গড়ে তোলার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হতো। এখনো পাহাড়ের অনেক এলাকাজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানি ফলবাগান গড়ে তুলছে। স্থানীয়রাও ফল চাষের দিকে আগ্রহী হচ্ছে। কারণ, এতে দ্রুত ও নিয়মিত আয় হয়। বাজারে এসব কৃষিপণ্যের চাহিদাও বেশি। কিন্তু এখানেও সেই একই কথা বলতে হচ্ছে, এ ধরনের একক ফসলের চাষ পাহাড়ের মাটি ও প্রকৃতিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখানকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।
প্রথম আলো: এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী?
দেবাশীষ রায়: এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। বনভূমি বেশি থাকায় এখানে কৃষিকাজের সুযোগও কম। এখন আমরা যদি কাউকে বলি আপনি সেগুন রোপণ করবেন না। তিনি তো তাতে রাজি হবেন না। কারণ, তাঁরও তো সন্তানকে ভালো খাওয়া–থাকা এবং পড়াশোনা করানোর অধিকার আছে। তাঁরা বলবেন সেগুনগাছ লাগালে বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় হবে। ছেলেকে ঢাকা বা চট্টগ্রামে পড়াতে পারবেন। তার মানে দাঁড়াল পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। পাহাড়িদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে প্রচুর রেঙ্গুয়ান আম হয়, যার কোনো সেচ লাগে না। আম্রপালি হচ্ছে। এখন সরকার যদি এখানে আমের পাল্প বা জুস বানানোর কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়, তাহলে অন্যান্য ফলমূল প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা গড়ে তুলতে বেসরকারি খাত আগ্রহী হবে। তাহলে এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এটা সরকার ছাড়া অন্য কারও পক্ষে করা সম্ভব নয়।
প্রথম আলো: পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কোনো উপায় আছে?
দেবাশীষ রায়: রাঙামাটির ছোট হরিণা মৌজার বেশ কয়েকটি মৌজা বন আছে। সেখানে ছোট হরিণা নদী বয়ে গেছে। সেখানকার জীববৈচিত্র্য বেশ ভালো। কারণ, কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সেখানে জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগ সফল হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি, ছড়া, ঝিরি, নদীসহ কোনো জরিপ হয়নি। যে কারণে এ অঞ্চল নিয়ে কোনো সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যেখানে বন বেশি থাকবে, সেখানে সরকার উন্নয়ন বরাদ্দ বেশি দিলে স্থানীয় লোকজন বন রক্ষায় উৎসাহ পাবে।
প্রথম আলো: পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি রক্ষায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে কারা?
দেবাশীষ রায়: শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে যে পরিমাণে বনভূমি আছে, তার ৬০ শতাংশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আছে। যেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বন ধ্বংস হয়েছে। বাংলাদেশেও আপনারা একই অবস্থা দেখবেন। এ দেশের দু–একটি বনভূমি ছাড়া সবখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো বন রক্ষা করছে। তাদের সরিয়ে দিয়ে বন বিভাগ বা সরকারি অন্য কোনো সংস্থার একক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করলেই বন ধ্বংস হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি, মধুপুরে গারো, সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরারা একসময় বেশি থাকত। তখন সেখানে বন ও বন্য প্রাণী বেশি ছিল। তাদের সরিয়ে সেখানে নতুন বসতি গড়ার ফলে বন ধ্বংস বেড়ে গেছে।
এটা খুব পরিষ্কার করে বলা যায়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো যেখানে থাকবে, সেখানে বন রক্ষা পাবে। কারণ, বনকে তারা পূজা করে, তাদের জীবনের অংশ মনে করে। তাদের জীবিকা আসে সেখান থেকে। ফলে তারা নিজেদের স্বার্থে বন রক্ষা করবে। আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে যেসব ন্যাড়া পাহাড় দেখবেন, সেগুলো বন বিভাগের সংরক্ষিত বন। আর যেগুলো সবুজ গাছপালা দেখবেন, তা পাহাড়িদের বসতি এলাকার বন। এটি দেখে বোঝা যায় পাহাড়ের বন কীভাবে রক্ষা করতে হবে।