পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ দেশের বড় নদ-নদীগুলোয় পানি বেড়েছে। প্লাবিত হয়েছে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা।
পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ দেশের বড় নদ-নদীগুলোয় পানি বাড়ছে। এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গতকাল শুক্রবার উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলেছে, গতকাল সকাল নয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বাড়ায় এদিন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী প্রায় ১৫টি চর এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১০ হাজার পরিবার।
পাউবোর নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট (৪৪টি) খুলে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গের আরেক জেলা কুড়িগ্রামেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বাড়ায় গতকাল জেলার তিন শতাধিক চরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাউবো বলেছে, গতকাল জেলার বড় সব নদীর পানি বেড়েছে। বেলা তিনটায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় ইতিমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার ৪টি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ইউনিয়নগুলোর চরাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও ঘাঘট নদের পানি আরও বেড়েছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গতকাল বগুড়ার ৬৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুপুর ১২টায় সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র বলেছে, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে সব কটি পয়েন্টে যমুনার পানি বেড়েছে। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনার পানি বাড়ায় জামালপুরে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে।
পদ্মা নদীর পানি আবার বাড়ায় রাজবাড়ীর প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফরিদপুর সদরের চারটি, চরভদ্রাসনের চারটি, সদরপুরের দুটি এবং ভাঙ্গার একটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ১১টি ইউনিয়নের ২৩৯টি গ্রামের ১৯ হাজার ৮০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]