উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৫১ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল শনিবার বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন।
যমুনায় পানি বাড়ায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল এবং নদী তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি ও বিদ্যালয় ভবন। তলিয়ে গেছে পাটসহ নানা ফসল। জলমগ্ন এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে পাশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। যমুনায় পানি যত বাড়ছে, চরাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ তত বাড়ছে। শ্রেণিকক্ষ পানি ওঠায় শনিবার বিকেল পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে।
বগুড়ার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। শুক্রবার বেলা তিনটায় ছিল ১৫ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার বেলা তিনটায় ১৬ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী আরও এক সপ্তাহ যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর, কাজলা, কর্নিবাড়ি ও বোহাইল ইউনিয়ন এবং সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ও তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি দুর্গম চরাঞ্চলের বসতবাড়ি ও বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে পাট, আউশ ধানসহ বিস্তীর্ণ ফসলের খেত। যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে প্রবল ভাঙন।
যমুনায় পানি বাড়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চর ভাঙ্গুরগাছা, চর দলিকা, চর হাটবাড়ি, চর আউচারপাড়া, চর খাটিয়ামারি, হাটশেরপুর ইউনিয়নের চর চকনতিনাথ, কাজলার চরের উত্তর ও দক্ষিণ বেনুপুর, জামথৈল, টেংরাকুড়া, পাকদহ, পাকুরিয়া, ঘাঘুয়ার চর, মূলবাড়ি, তালতলা, নান্দিনার চর, বানিয়াপাড়ার চরের বসতবাড়ি ও ফসল। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সোনাতলা উপজেলার খাবুলিয়ার চর, সরলিয়ার চর, ভিকনেরপাড়ার চর, মহেশপাড়ার চর, জন্তিয়ার চর ও খাটিয়ামারির চর। এসব চরের বসতবাড়িতেও পানি থইথই করছে। তলিয়ে গেছে কৃষকের পাটসহ নানা ফসল। চাষিরা দ্রুত পাট কেটে নিচ্ছেন। জলমগ্ন এলাকার লোকজন বসতবাড়িতে উঁচু মাচান তৈরি করে সেখানে বসবাস করছে।
>গতকাল যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে এলাকা।
খাটিয়ামারির চরের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের ভেতরে উঁচু মাচান তৈরি করে বসবাস করছি। গরু-ছাগল নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছি। পাট, আউশ ধানসহ বহু ফসল তলিয়ে গেছে।
চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় তাঁর ইউনিয়নের চারটি চর প্লাবিত হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর উপজেলার ছয়টি চর প্লাবিত হয়েছে।
যমুনায় পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশা এবং কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ, ইছামারা, চন্দনবাইশা, নিজ চন্দনবাইশা, ঘুঘুমারি, দক্ষিণ ঘুঘুমারি শেখপাড়া, তালুকদারপাড়া গ্রামের মানুষ।
এসব গ্রামের পানিবন্দী মানুষ মালামাল, গরু–বাছুর নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। যমুনার ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯০০ মিটার ক্রস বাঁধ নির্মাণ করলেও বন্যা থেকে রক্ষা মেলেনি রোহদহ গ্রামের লোকজনের। গতকাল পানি ঢুকে পড়েছে রোহদহ গ্রামে।
যমুনায় পানি বাড়ায় সারিয়াকান্দি উপজেলার ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল আলম বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ১৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজহার আলী মণ্ডল বলেন, যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।