শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আটটি ইউনিয়নেই অগভীর নলকূপের পানিতে অসহনীয় মাত্রার আর্সেনিক পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মাঠপর্যায়ে জরিপে এ তথ্য মিলেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের দক্ষিণের উপজেলা গোসাইরহাটের আটটি ইউনিয়ন রয়েছে। আটটি ইউনিয়নের ১২০ গ্রামে সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। গ্রামগুলোতে আড়াই হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডের একটি করে অগভীর নলকূপের পানির পরীক্ষা করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে দশমিক শূন্য পাঁচ মিলিগ্রাম। কিন্তু গোসাইরহাটে প্রতি লিটার পানিতে দশমিক পাঁচ মিলিগ্রাম আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, গোসাইরহাটের আটটি ইউনিয়নের ৯৬টি ওয়ার্ডে অগভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিটি নলকূপে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। তাঁরা সনাতনী পদ্ধতিতে আর্সেনিক পরীক্ষা করেছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে করলে আর্সেনিকের মাত্রা আরও বেশি পাওয়া যেত। পরীক্ষার প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
নাগেরপারা ইউনিয়নের বড়কালিনগর গ্রামের কৃষক নূর ইসলামের বাড়িতে অগভীর নলকূপ আছে। ওই নলকূপের পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ওই নলকূপটির পানি পরীক্ষা করে তাতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, তাঁদের বাড়িতে অন্য কোনো পানির উৎস না থাকায় অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ওই পানি সংসারের সব কাজে ব্যবহার করতে হয়। মাঝেমধ্যে ওই পানিই খেতে হয়। এখন শুনছেন, পানিতে আর্সেনিক আছে। এখন চিন্তায় পড়ে গেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন খলিলুর রহমান বলেন, পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা বাংলাদেশে প্রতি লিটারে দশমিক শূন্য পাঁচ মিলিগ্রাম। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় এর পরিমাণ দশমিক শূন্য এক মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে। পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকলে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য তা হুমকিস্বরূপ। আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করলে লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্লাড ক্যানসার হওয়ারও ঝুঁকি থাকে। পান না করে শুধু ব্যবহার করলে ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। হাত-পাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে ঘা হতে পারে। এমনকি ত্বকের ক্যানসারও হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শরীয়তপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার এরশাদুজ্জামান বলেন, গভীর ও অগভীর নলকূপের পানিতে
আর্সেনিক আছে কি না তার পরীক্ষার কাজ চলছে। গোসাইরহাট উপজেলার সকল অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। এ এলাকায় ১০০ ফুট থেকে ১৬০ ফুট মাটির নিচে অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। তাঁরা ওই নলকূপগুলো চিহ্নিত করে রেখেছেন। ওই নলকূপগুলোর পানি ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নলকূপগুলো অপসারণ করা হবে।