কক্সবাজার সদরের ফিশারিজ ঘাট থেকে কয়েক ঘণ্টা পরপর সোনাদিয়া দ্বীপের দিকে ট্রলার ও স্পিডবোট ছেড়ে যায়। বঙ্গোপসাগরের এক ফোঁটা দ্বীপটিতে দুই হাজারের মতো মানুষের বসবাস। আরও হাজারখানেক মানুষের সেখানে নিত্য যাতায়াত।
গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘাটে গিয়ে দ্বীপের নাম বলতেই ট্রলারের চালক আঞ্চলিক ভাষায় বলে উঠলেন, ‘ঘুরিবার লাই, নকি হুনিমাছ (শুঁটকি) কিনিবার লাই আইস্য (এসেছ)? নকি লাকরি (কাঠ) কিনিবার লাই? কিল্লাই হ্যাডে যাইবা?’
বললাম, ‘ঘুরতে’। সঙ্গে সঙ্গে ট্রলার ও স্পিডবোটের জটলা থেকে চালকদের টুকরো টুকরো বাণী নিক্ষিপ্ত হলো: ‘যা, মন ভরি দিয়া (দ্বীপ) দেকি আইয়্যো!’ ‘আইতে (আগামী) বছর এ দিয়াত আইর ন যাইবার ফারিবা।’ ‘টিঁয়াপয়সা থাকিলে হিবা অইন্য হতা (কথা)!’
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফণীর পরপর সাগর তখন উত্তাল। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল, সাত কিলোমিটার পাড়ি দিতে চালকেরা কেউ রাজি হলেন না। ঝড়ের আগে সোনাদিয়ার যে বাসিন্দারা এপারে আটকা পড়েছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ ঘাটে ঘোরাঘুরি করছিলেন। দ্বীপ সম্পর্কে কিছু তথ্য তাঁদের সঙ্গে ঝালাই করে নেওয়া গেল।
এর আগে গত ডিসেম্বরে সোনাদিয়া চষে ঘুরেছিলাম। স্পিডবোট ভিড়েছিল দ্বীপের পূর্বপাড়া সৈকত ঘেঁষে। টলটলে নীল পানিতে পা ভিজিয়ে আর সাদা তপ্ত বালু মাড়িয়ে দ্বীপে উঠে মুগ্ধ হতে হয়। তটরেখা ধরে সারি সারি ঝাউগাছ আর কেয়াঝোপ।
এক যুগ আগেও ১৩ জাতীয় শ্বাসমূলীয় গাছ এবং ১৫৮ প্রজাতির গাছের সংরক্ষিত বনে পুরো দ্বীপ ঢাকা ছিল। গাঙচিল, পানচিলসহ নানা জাতের পাখিদের ওড়াউড়ি কলকাকলি এখনো আছে। সৈকতে বিপন্ন প্রজাতির সবুজ কাছিমের দেখা পাওয়াও বিচিত্র নয়। আসে নানা জাতের অতিথি পাখি।
একচিলতে লম্বাটে দ্বীপটি আয়তনে প্রায় ১০ হাজার একর। দ্বীপ ঘিরে টানা সৈকত। এখানে চীনের সহায়তায় গভীর সমুদ্রবন্দর করার একটি পরিকল্পনা এখন হিমাগারে আছে। নথিপত্র বলছে, সরকার ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে দ্বীপটি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দীর্ঘ মেয়াদে বরাদ্দ দিয়েছে। দামি পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার শর্তে গত বছর বেজা এই দ্বীপের পুরোটা অধিগ্রহণ করেছে।
বেজার পরিকল্পনা
সোনাদিয়া দ্বীপটি মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। বেজার সাম্প্রতিক নথি বলছে, প্রাথমিকভাবে দ্বীপের ৩০ শতাংশ এলাকায় পরিবেশবান্ধব ইকোট্যুরিজম পার্ক হবে। বাকি জমি সবুজ ও সংরক্ষিত থাকবে। ভারতীয় কোম্পানি মাহিন্দ্র গ্রুপকে যুক্ত করে ৫০০ একরের মতো এলাকার নকশা চূড়ান্ত হয়েছে।
সরকারের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভবপরতা যাচাইয়ের একটি সমীক্ষা করেছে। বেজার পরিকল্পনায় উপকূলে বেড়িবাঁধ করার কথা আছে। দ্বীপটি সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে দেড় থেকে সাড়ে চার মিটার উঁচু। সেখানে যেকোনো অবকাঠামো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ছয় মিটার উঁচুতে নির্মাণ করতে হবে। পুরো প্রকল্পটির জন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা মূলধন লাগবে।
ইকোট্যুরিজম পার্কের ছোট একটি অংশ মহেশখালী দ্বীপেও বিস্তৃত। সরকারের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) সম্প্রতি প্রকল্পের কর্মকাণ্ডের একটি পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা করেছে। সমীক্ষাটি বলছে, বেজা হোটেল–মোটেল ও গলফ কোর্সের জন্য ৫০০ একর এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৫৫১ একর জমি রেখেছে। প্রকল্পের আওতায় ১০টি হোটেল–মোটেল, দুটি গলফ কোর্স ও দুটি টেনিস কোর্ট হবে। থাকবে শিশু পার্ক, মসজিদ, জাদুঘর, কমিউনিটি সেন্টার, শৈবাল চাষ, মুক্তা চাষসহ নানা তৎপরতা। ৩০ একর জমিতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে।
>লম্বাটে সোনাদিয়া দ্বীপটি আয়তনে প্রায় ১০ হাজার একর
জীববৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপটির ৪৭ শতাংশ শ্বাসমূলীয় বন
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে পর্যটনমুখী প্রকল্প হচ্ছে দ্বীপে
বেশি পর্যটক পরিবেশ ও প্রাণিকুলের জন্য ক্ষতিকর হবে
পরিবেশবিদেরা বলছেন, বেশি পর্যটক পরিবেশ ও প্রাণিকুলের জন্য ক্ষতিকর হবে। দ্বীপে বেজা ৫০০টি করে হরিণ ও বানর ছাড়বে। এভাবে বাইরের প্রাণী আনলে দ্বীপে পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
অন্যদিকে, সোনাদিয়া ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকাও বটে। সিইজিআইএসের সমীক্ষাটি বলছে, পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষার জন্য এবং পর্যটকদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যও এখানে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন করতে হবে। হোটেল-মোটেল করার দরকার নেই। পরিবেশ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে হবে।
মহেশখালী, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়া মিলিয়ে কক্সবাজার–২ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। সোনাদিয়াসহ এলাকাজুড়ে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ সম্পর্কে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এসব থেকে এলাকার মানুষেরও উন্নতি হতে হবে; পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা যাবে না। কথা ছিল, প্রকল্পগুলোতে এলাকার মানুষেরা চাকরি পাবেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দক্ষতা না থাকার যুক্তিতে অনেককে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। সাংসদের আরেকটি বড় দাবি, এত প্রকল্প করতে গিয়ে এলাকার পরিবেশ–প্রকৃতির যেন বড় ধরনের ক্ষতি না হয়।
বিপন্ন বন, বিপন্ন প্রাণী
দ্বীপের প্রধান শ্বাসমূলীয় গাছ হচ্ছে বাইন ও কেওড়া, আছে কেয়া। এ ছাড়া, নারকেল ও বরইয়ের গাছ অনেক। ভবিষ্যতে দ্বীপে বন হয়তো থাকবে, তবে মানুষের পরিকল্পনা অনুযায়ী। ইতিমধ্যেই অবশ্য মানুষের জীবন-জীবিকার তাগিদ ও লোভ অনেকটা বন গ্রাস করে ফেলেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঘুরতে ঘুরতে পূর্বপাড়া ঘাটে গিয়ে দেখেছিলাম, গাছ কাটা তক্তার স্তূপ আর শুঁটকির বস্তা নৌকায় উঠছে। সাগরে তখন ‘কালো’ চিংড়ির মৌসুম। দ্বীপের ঘেরগুলো থেকে আসছিল বাটা, ভেটকি (কোরাল), বাগদা আর কাঁকড়া। ঝাঁপি ভরে সব যাচ্ছিল কক্সবাজারে।
ঘাট ঘুরে সাগরতীরের সৃজিত ঝাউবন পেরিয়ে দ্বীপের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে গাছপালা হালকা হতে হতে নেই হয়ে যায়। সেখানটায় চারপাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লবণখেত আর মাছের ঘের। ইতস্তত কিছু মাচায় মাছ শুকানো হচ্ছিল।
সিইজিআইএসের সমীক্ষা বলছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা পর্যটন চালু হলে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন কমে যাবে। মাছ উৎপাদনও অনেকটা কমবে। দ্বীপের মাঝামাঝি অংশে শ্বাসমূলীয় বনের ভেতর দিয়ে আড়াআড়ি গিয়েছে সমান্তরাল অনেক জলপ্রণালি। সেখানে জেলেরা মাছ ধরেন, ঘেরও আছে।
সরকার ২০০৪ সালে দ্বীপের বড় অংশকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ সেখানকার মাটি-পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। ওই বছরই সরকার একে সংরক্ষিত বনও ঘোষণা করে। বেজা অধিগ্রহণ করার পর এটি এখন আর বন বিভাগের দায়িত্বে নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের সূত্র ধরে সেখানে আছে সোনাদিয়া দ্বীপ জীববৈচিত্র্য রক্ষা দল। দলটির প্রধান মো. গিয়াসউদ্দিন জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আগেও এই দ্বীপে গাছ কাটা চলত। কিন্তু বেজার অধিগ্রহণের পর গাছ কাটা অনেক বেড়ে গেছে। বন বিভাগের নজরদারি আর নেই। বেজাও কিছু করছে না।
দ্বীপবাসী দুজন তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, লবণখেত, তরমুজখেত, ধানখেত, ঘের, শুঁটকির মাচা—সবই বন কেটে করা হয়েছে। আগে বিএনপির নেতারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বন কেটে কাঠ বিক্রির হোতাও তাঁরা।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সরকারদলীয় নেতা মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সংরক্ষিত বন হওয়ার অনেক আগে থেকেই মানুষ এখানে থাকে। মানুষই বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে বন সৃজন করেছেন। এখন জীবিকার প্রয়োজনে গাছ কেটে মানুষ লবণ, ফসল আর মাছের চাষ করছেন।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, বেজার অধিগ্রহণের পর তাঁদের মৌখিকভাবে চলে যেতে বলা হয়েছে। তাঁরা শুনেছেন, এখানে দেশি-বিদেশি বড়লোকদের জন্য বিশাল পর্যটনকেন্দ্র হবে। থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুরের মতো সাদা ধবধবে জাহাজ এসে ভিড়বে। এলাকার মানুষ বিনা অনুমতিতে সেখানে ঢুকতে পারবে না।
সিইজিআইএসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, সোনাদিয়ার ৪৭ শতাংশ এলাকায় এখনো বাদাবন তথা শ্বাসমূলীয় বন রয়েছে। গত দুই যুগে বনের ২৬ শতাংশ ধ্বংস করা হয়েছে। সমীক্ষা বলছে, দ্বীপটি দেশের প্রধান জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি এলাকাগুলোর একটি। জাতিসংঘ একে ‘রামসার এলাকা’ ঘোষণা করে বৈশ্বিক পরিসরে একই স্বীকৃতি দিয়েছে।
সিইজিআইএসের সমীক্ষা বলছে, সোনাদিয়া দ্বীপে বিশ্বজুড়ে মহাবিপন্ন তিন প্রজাতির পাখি আছে। এর একটি চামচঠুঁটো বাটন। এ ছাড়া দ্বীপে অনেক আছে বিপন্ন জলপাই সবুজ ও সামুদ্রিক সবুজ কাছিম। দ্বীপের আশপাশের সমুদ্রে থাকে ইরাবতী, ইন্দো প্যাসিফিক ও পাখনা ছাড়া ডলফিনেরা।
পর্যটন ও ঝুঁকি
প্রাথমিকভাবে বেজা দ্বীপটিতে দামি আবাসিক এলাকা, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল। তবে নথিপত্র বলছে, আপাতত পর্যটনই মূল লক্ষ্য। সোনাদিয়া ছাড়াও টেকনাফে নাফ নদীর মোহনায় এবং কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের প্রান্তে দুটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলছে বেজা।
পবন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে যাতে ভ্রমণের জন্য বিদেশে যেতে না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করব। পাশাপাশি বাংলাদেশে যাতে বিপুল বিদেশি পর্যটক আসেন, তাও নিশ্চিত করবে সোনাদিয়া, সাবরাং ও নাফ ট্যুরিজম পার্কের মতো পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্রগুলো।’
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, দ্বীপটির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে পর্যটনের পরিকল্পনা করা হবে। আর সিইজিআইএসের সমীক্ষা বলছে, আইনানুযায়ী পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (ইএমপি) করা বাধ্যতামূলক। সেটা করা না হলে এই দ্বীপের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
সিইজিআইএস নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের সুপারিশ করেছে। তাদের সমীক্ষা জোর দিয়ে মনে করাচ্ছে যে সোনাদিয়া ইসিএ অর্থাৎ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে অতিথি ও সৈকতবাসী পাখিদের সমস্যা হবে। সৈকতের বালুচরগুলোতে বাসা বেঁধে কাছিম ডিম পাড়ে। তাতে বাধা পড়বে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি তো আছেই। সব মিলিয়ে সিইআইজিএস বলছে, ওই দ্বীপে পর্যটকদের রাতে থাকা নিষিদ্ধ করতে হবে। হোটেল–মোটেল নয়, দিনের পর্যটকদের জন্য কিছু অবকাঠামো থাকলেই হবে। এ ছাড়া, পর্যটকেরা শুধু নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় যেতে পারবেন। তাঁদের জন্য প্রশিক্ষিত পথপ্রদর্শক (গাইড) রাখতে হবে।
সরকারের দুটি সমীক্ষাই বলছে, বেশি পর্যটক যাতায়াত করলে জাহাজ ও ট্রলারের শব্দ বেশি হবে। এতে অতিথি পাখি ও ডলফিনের চলাচল ব্যাহত হবে। হোটেল–মোটেলে মানুষ রাত্রিবাস করলে বর্জ্য বেশি হবে। হাঁটার জন্য বনের মধ্যে মাচার মতো কাঠের রাস্তা বানানো হবে। এতে বন কাটা পড়বে। বেড়িবাঁধও ক্ষতিকর হবে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে চামচঠুঁটো বাটন সংরক্ষণের জন্য একটি টাস্কফোর্স আছে। তাদের হিসাবে সোনাদিয়ায় এ পাখি ২২ থেকে ২৫টি আছে। বিশ্বে মোট আছে ৪০০টি। টাস্কফোর্সে বাংলাদেশের সমন্বয়কারী সায়েম উ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া দ্বীপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এর কাদাচর ও বালিয়াড়ি। মহাবিপন্ন পাখি ও কাছিমগুলোর বসতি এই কাদাচর ও বালিয়াড়ির কারণেই। পর্যটনের জন্য এই দ্বীপে বেড়িবাঁধ দেওয়া হলে ওই বালিয়াড়ি, কাদাচর নষ্ট হয়ে যাবে।
আকরাম হোসেন দ্বীপের একজন সাধারণ অধিবাসী। তিনি বলেন, দ্বীপে মানুষ কম। তাই কাছিম বালুচরে নির্বিঘ্নে ডিম পাড়ে, বড় হয়। শীতের সময় এখানে হাজার হাজার পাখি এসে জড়ো হয়। এখানে বেশি পর্যটক এলে, দিন-রাত আলো জ্বললে এসব প্রাণী এই দ্বীপ ছেড়ে পালাবে।
রাকিবুল আমীন প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের এদেশীয় পরিচালক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সোনাদিয়ার মতো পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি এলাকায় এ ধরনের পর্যটন কার্যক্রম চালানোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। এর আগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও কক্সবাজার সৈকতাঞ্চলে লাগামছাড়া পর্যটন সেখানকার পরিবেশ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের অনেক ক্ষতি করেছে। সোনাদিয়ার ক্ষেত্রে এমনটি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: