পচা পেঁয়াজের ঝাঁজে শতাধিক গাছের মৃত্যু

সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের নবতকাটি এলাকায় ভারত থেকে আমদানি করা পচা পেঁয়াজ ফেলার কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। গত শনিবার তোলা। প্রথম আলো
সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের নবতকাটি এলাকায় ভারত থেকে আমদানি করা পচা পেঁয়াজ ফেলার কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। গত শনিবার তোলা।  প্রথম আলো

পচা পেঁয়াজের ঝাঁজে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের পাশে নবাতকাটি এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সড়কে শতাধিক কড়ইগাছ মরে গেছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের পচাগুলো বাছাই করে সড়ক ও গাছের গোড়ায় ফেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে আমদানি করা হয়। এসব পেঁয়াজ বন্দরের নির্ধারিত ইয়ার্ড ছাড়াও বেসরকারি গুদামে রাখা হয়। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আনতে আনতে কিছু পেঁয়াজ পচে যায়। পরে গুদামে রাখায় আরও কিছু পচে। ব্যবসায়ীরা সেগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর আগে বাছাই করেন। এ সময় পচা পেঁয়াজগুলো বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলেও বর্জ্য ফেলার কোনো ব্যবস্থা এখানে গড়ে তোলা হয়নি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কর্তৃপক্ষের কাছে বর্জ্য ফেলতে নির্ধারিত একটি জায়গার জন্য আবেদন করা হলেও তা দেওয়া হয়নি। তাই ব্যবসায়ী বাধ্য হয়ে সড়কের পাশে এসব পচা পেঁয়াজ ফেলছেন। দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ ফেলার কারণে সড়কের অনেকগুলো গাছ মরে গেছে। একই সঙ্গে পেঁয়াজের ঝাঁজ ও গন্ধে এলাকার লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল ওহাব বলেন, সড়কের পাশে পচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধে এলাকায় বাস করা দায় হয়ে পড়েছে। এমনকি ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে তাঁদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের সভাপতি ও সরকারি মহসিন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ মো. নাজিমউদ্দিন বলেন, নানা কারণে জেলায় গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পচা পেঁয়াজের কারণে নবাতকাটি এলাকার গাছ মারে যাচ্ছে ও বাতাস দূষিত হচ্ছে।

গত শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোমরা-শাঁখরা রাস্তার ঘোষপাড়া পর্যন্ত এবং ভোমরা-সাতক্ষীরা সড়কে বর্ডার গার্ড বাঁশকল পর্যন্ত শতাধিক ছোট-বড় গুদাম রয়েছে। অধিকাংশ গুদামে নারী শ্রমিকেরা পেঁয়াজ বাছাইয়ের কাজ করছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে পচা পেঁয়াজ বস্তায় ভরে ভ্যান বা ট্রলিতে করে নবাতকাটি এলাকায় ফেলা হয়। এতে নবাতকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গাংনিয়া সেতু পর্যন্ত পেঁয়াজের গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা। এ ছাড়া রাস্তার ধারে শতাধিক গাছ মারা গেছে। আরও অনেক গাছের ডালপালা শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পচা পেঁয়াজের ঝাঁজ পরিবেশ, মানুষ ও গাছের জন্য ক্ষতিকর। গাছ মাটি থেকে খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে। মাটিতে গাছের খাদ্যের প্রচুর পরিমাণ উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও জৈব উপাদান আছে। মাটি বিষাক্ত হয়ে গেলে ওই উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তখন গাছ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে না পারায় এর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া পচা পেঁয়াজের গন্ধে মানুষজনের শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই পচা পেঁয়াজ বা সংশ্লিষ্ট বর্জ্য অবশ্যই নির্ধারিত স্থান ফেলতে হবে এবং ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

ভোমার ইউপির চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী বলেন, এ এলাকায় জমির দাম অনেক বেশি। তাই ব্যক্তিগতভাবে কেউ জায়গা দিতে চায় না। তবে নবাতকাটি খালে অথবা কাছের ইছামতী নদীতে পচা পেঁয়াজ ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদীতে ফেললে জোয়ার-ভাটায় পেঁয়াজ অন্যদিকে ভেসে যাবে। এতে পানিতেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, কয়েক দিন আগে বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। সম্প্রতি তিনি ওই এলাকা পরিদর্শন করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

উপকারভোগীদের ইটের তৈরি আধা পাকা ঘর করে দেন ইউএনও মো. ইলিয়াছুর রহমান।