নিষেধাজ্ঞায় বাড়তে পারে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ

বেশিসংখ্যক মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ায় এবার মেঘনায় ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি জাটকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইলিশ মাছ

চাঁদপুরসহ সারা দেশে প্রজনন সময়ে মেঘনায় এবার ৫১ শতাংশের বেশি মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে। এতে ভবিষ্যতে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইলিশ উৎপাদনের প্রত্যাশিত এ হার গত দুই বছরের তুলনায় বেশি।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান গতকাল রোববার এসব তথ্য জানান। জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, মা বা ডিমওয়ালা ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময় ইলিশ বিক্রি, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মজুত করাও নিষিদ্ধ করা হয় ওই পরিপত্রে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মা ইলিশ রক্ষায় এবার মেঘনায় ২৮৫টি অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানে ৭০৩ লাখ মিটারের বেশি কারেন্ট জাল এবং পাঁচ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। ৬৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ২৫৪ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারী জেলেদের বিরুদ্ধে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে মামলা হয়েছে ১৭২টি।

আনিসুর রহমান বলেন, সাধারণত প্রজননের সময় মা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে মেঘনার মিঠা পানিতে চলে আসে। এরপর নির্ধারিত সময়ে, অর্থাৎ, প্রতিবছর অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় তারা ডিম ছেড়ে পুনরায় সমুদ্র বা সমুদ্রের মোহনায় চলে যায়। কয়েক বছর আগে ইলিশের প্রজননের নির্ধারিত সময় ছিল ১০-১১ দিন। ওই সময় বাড়িয়ে এখন ২২ দিন করা হয়েছে।

আনিসুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে মেঘনায় ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। ২০১৯ সালে ৪৮ দশমিক ৯২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ বছরের গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৫১ দশমিক ২ শতাংশ মা ইলিশ মেঘনার বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম ছেড়েছে। বেশিসংখ্যক মা ইলিশ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ায় এবার জাটকা বা ইলিশ উৎপাদনের হারও বাড়বে। এবার ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি জাটকা উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব জাটকা রক্ষা করা গেলে এ মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুর বলেন, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে বাজারে ব্যাপক হারে ডিমওয়ালা ইলিশ এলেও ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। সাধারণত প্রতিবছর ৪০ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়লেই ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে যায়।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার এবং মতলব উত্তর উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, এবার ইলিশ ধরা ও বিক্রি বন্ধে কার্যকর অভিযান চালানো হয়েছে। এ কারণে ভবিষ্যতে মেঘনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে।