বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘিতে এবার মাছ ও হাঁস অবমুক্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব মাছের পোনা ও হাঁস অবমুক্ত করা হয়। এর আগে দুর্গাসাগরকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে গাছে গাছে হাঁড়ি বেঁধে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে প্রশাসন। গত রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গাছে হাঁড়ি বাঁধা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক।
গতকাল বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুর্গাসাগর দিঘিতে ৪০০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা এবং ১০০ দেশি জাতের হাঁস অবমুক্ত করেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব আহামেদ, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হাওলাদার, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা কুলসুম, বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে বরিশাল-স্বরূপকাঠি আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাধবপাশা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘি অবস্থিত। দিঘিটির জলাভূমির আয়তন ২৭ একর। এর চারপাশে রয়েছে নানা গাছে ভরা জঙ্গল। সব মিলিয়ে দুর্গাসাগরের আয়তন ৪৫ দশমিক ৪২ একর। দিঘির মাঝখানে রয়েছে গাছগাছালিতে ছাওয়া দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ। এই দিঘিতে প্রতিবছর শীতে হাজারো পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে। পাখির কলরবে মুখর থাকে এই এলাকা।
কিন্তু ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাখির আগমন কমতে থাকে। এ ছাড়া দিঘিটির অল্প দূরত্বে বরিশাল বিমানবন্দর অবস্থিত। উড়োজাহাজের ওঠানামা এবং বিকট শব্দে ক্রমেই পাখির আগমন লোপ পায়। তবু শীতে এখনো এখানে কমবেশি পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে।
ঐতিহাসিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ণ এই বিশাল জলাধার খনন করেন। তাঁর স্ত্রী দুর্গামতির নাম অনুসারে খনন করা হয় দুর্গাসাগর দিঘি। পরে দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল এই দিঘি। ১৯৭৪ সালে সরকারি উদ্যোগে দিঘিটি পুনঃসংস্কার করা হয়।
আজ হাঁস ও মাছ ছাড়ার সময় জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, দুর্গাসাগরকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এরই মধ্যে গাছে গাছে হাঁড়ি বেঁধে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দুর্গা সাগরের জঙ্গলে বানর, ১০০ টি কবুতর এবং আরও ১০০ টি হাঁস ও ১৫ টি রাজহাঁস অবমুক্ত করা হবে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, দুর্গাসাগরকে পাখির অভয়াশ্রম ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসেই দুর্গাসাগর উন্নয়নে বড় একটি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।