অবৈধ দখলে ছোট হয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী। একসময়ের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু চকবাজার, ঘাটফরহাদবেগ এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়া চাক্তাই খালটি এখন নালাসদৃশ। নৌকা নয়, এখানে সব সময় ভাসমান অবস্থায় থাকে আবর্জনা। বেড়েছে নদী ও সংলগ্ন খালের দূষণ। এর দায় যতটা প্রকৃতির, তার চেয়ে বেশি দখলদারদের। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নদীর পার পুরোপুরি অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়নি। আড়াই বছর আগে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলেও মাঝপথে তা থেমে যায়।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের একটি রিটের পর হাইকোর্ট কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট। এর আগের বছর হাইকোর্টের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নদীপারের ২ হাজার ১১২টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল।
গত ২৬ আগস্ট জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদীর সীমানা নির্ধারণ করে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মোহনাসহ কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এ নির্দেশনা দেন।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন গত বছর কর্ণফুলীর বিভিন্ন স্থানে জরিপকাজ চালায়। তাতে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতু এলাকায় জোয়ারের সময় প্রস্থ ৫১০ মিটার। ২০১৪ সালে এডিবির পরিমাপ অনুযায়ী, সেতু এলাকায় নদীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে প্রস্থ ছিল ৮৯৮ মিটার, পরে কমে হয়েছে ৪৩৬ মিটার। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, দখল ও দূষণের কারণে নদী ছোট হয়ে আসছে। দখল-উচ্ছেদের জন্য নদী কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক ইদ্রিস আলীর কর্ণফুলীর ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন নর্থ আমেরিকান রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী দখল ও দূষণে জড়িত। দখলের কারণে দিন দিন নদীর প্রশস্ততা কমেছে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত খননও রয়েছে। আর জনগণের সচেতনতার অভাবে পলিথিনের স্তর পড়েছে কর্ণফুলীর তলদেশে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম উচ্ছেদ শুরু হয়। সদরঘাট ও মাঝিরঘাটে ২০ একর জমি উদ্ধার করা হয়। এরপর ২০২০ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ লালদিয়ার চর এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে। তাদের উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে কর্ণফুলী নদীর তৃতীয় সেতুর আশপাশে জেগে ওঠা চর দখল করে গড়ে ওঠা বস্তিতে বুলডোজার পড়েনি এখনো।
দখলের ব্যাপারে বস্তিবাসীদের অভিযোগ সরকারি দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।