দুই দিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা এক থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু তাপমাত্রার পারদ নিচে নামলেও গরমের অনুভূতিতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। বিশেষ করে ঢাকা ও রাজশাহীর অধিবাসীরা রীতিমতো মরুভূমির মতো লু হাওয়ার অনুভূতি পাচ্ছেন। ফলে গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসীর বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু করার থাকছে না।
গরমের এই অনুভূতিকে অবশ্য আবহাওয়াবিদেরাও গুরুত্ব দেন। আবহাওয়াবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আক্কু ওয়েদারের পর্যবেক্ষণ বলছে, আজ সারা দিন পারদ যন্ত্রের হিসাবে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও মানুষের কাছে এর অনুভূতি ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে রাজশাহীর তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও স্থানীয় ব্যক্তিদের অনুভূতি ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হিসাবে মরুভূমিতে দিনের গড় তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে রাতে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।
ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতের তাপমাত্রা ২৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। ফলে দিন ও রাত দুই সময়ে তাপমাত্রা বেশি থাকায় মানুষ গরমের অনুভূতি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে আকাশে মেঘ আর দমকা বাতাস থাকছে। তাতে অল্প সময়ের জন্য গরম কমলেও আবারও তীব্র গরমের অনুভূতি ফিরে আসছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে রাজধানীসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে। মাঝেমধ্যে কালবৈশাখী ও কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। অল্প সময়ের জন্য তাপমাত্রা কমলেও দিনের বাকি সময়জুড়ে গরম অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, বর্তমানে দেশের রাজশাহী, যশোর ও পাবনায় দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এসব এলাকার তাপমাত্রা গড়ে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকছে। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে এর কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকছে। রংপুর ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে গরমের অনুভূতি কিছুটা কম। বাকি স্থানগুলোতে গরমের অনুভূতি বেশি থাকছে। আর চলতি মাসের মধ্যে এই গরম থেকে রক্ষার খুব বেশি উপায় নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট ও অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় ২০২১ সালে দেশের ৫টি শহরের গ্রাম ও শহর এলাকার তাপমাত্রার পার্থক্য নিয়ে একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা গেছে, ঢাকার পার্শ্ববর্তী গ্রাম এলাকার সঙ্গে ঢাকার মূল শহরের তাপমাত্রার পার্থক্য সাড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ শহরের তাপমাত্রা অন্য এলাকার চেয়ে সাড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। মতিঝিল, গুলিস্তান ও ফার্মগেটের মতো এলাকার সঙ্গে গ্রামের তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে সে সময় ওই গবেষণা দলের দলনেতা আশরাফ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, শহরের তাপমাত্রার এই অনুভূতি আসে মূলত কংক্রিটের স্থাপনা বেড়ে যাওয়া এবং জলাশয় ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়ার কারণে। শহরের খুব কম এলাকায় ছায়া পাওয়া যায়। আর শহরের ঘরগুলো সব কংক্রিটের হওয়ায় সেখানে তাপমাত্রা ধরে থাকে। ফলে দিনের সঙ্গে রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসছে। যে কারণে গরমের অনুভূতি বাড়ছে।
আজ রোববার সারা দেশের মধ্যে একমাত্র সিলেটে মাত্র ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যান্য স্থানে মাঝেমধ্যে আকাশে বৃষ্টি ও বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকতে পারে। ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। আগামী কয়েক দিন একই ধরনের আবহাওয়া থাকতে পারে।