প্রায় এক যুগ আগে কৃষিবিদ এস এম কামরুজ্জামানের সহায়তায় নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের দুলশি গ্রামে গিয়েছিলাম একটি অচিন বৃক্ষের পরিচয় জানতে। বিশালাকৃতির এই বৃক্ষÿ তখন আমার কাছেও অচেনা। গাছটি ঘিরে স্থানীয়ভাবে অনেক লোকগল্প প্রচলিত। স্থানীয় লোকজন বিশ্বাস করেন, গাছটির কিছু আধ্যাত্মিক ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে গাছটি সংরক্ষণের ব্যাপারেও তাঁরা সোচ্চার। ঢাকায় ফিরে গাছটিকে খিরিবৃক্ষ হিসেবে শনাক্ত করে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন লিখি। এটি মূলত সফেদা পরিবারের গাছ। তারই সূত্র ধরে আমাকে অনেকেই ঢাকার লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের এই গাছের খোঁজ দিয়েছেন। গাছটি দেখতে গেলাম একদিন। দেখে মন ভরে গেল। গড়নটা এতই নিখুঁত, যেন টবের মধ্যে বসানো একটি গাছ। ডালপালাগুলো ঝুরির মতো নেমে এসেছে চারপাশে। খোলা মাঠের ধারে বিশাল ছাতার মতো রাজসিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন মনে করেন গাছটি শতবর্ষী। জানামতে, ঢাকায় রমনা পার্কে এদের একটিমাত্র নিকটাত্মীয় আছে। সেটির বৈজ্ঞানিক নাম Manilkara kaukii।
খিরিবৃক্ষ বা খিরনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Manilkara hexandra। দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে এ গাছ দেখা যায়। একই কারণে এ গাছকে দুর্লভ এবং বিপন্ন মনে করা হয়। বিশাল আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ এটি। প্রসারিত মুকুট, বাকলে দুধের মতো ল্যাটেক্স আছে। পাতা সরল, ডালের আগায় দলবদ্ধভাবে জন্মে এবং ঝুলে থাকে। ফুল হালকা হলুদ বর্ণের। ফল রসাল, জলপাই আকৃতির, পাকলে লাল হয়। খাওয়া যায়। কাঠ মজবুত, আসবাব তৈরিতে কাজে লাগে। ফুল ও ফলের মৌসুম অগ্রহায়ণ থেকে শ্রাবণ। বীজ থেকে চারা হয়। আদি আবাস শ্রীলঙ্কা।