কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেল। বাঁকখালী নদী পার হয়ে মহেশখালী খাল ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় তিন-তিনটি ইন্দোচীনা বোতল-নাক ডলফিনের দেখা পাওয়ায় কালাদিয়া চরে পৌঁছাতে আরেকটু দেরি হলো। ফলে ভাটা ধরতে পারলাম না। জোয়ারের পানি হাঁটু পর্যন্ত চলে আসায় দ্রুত স্পিডবোট নিয়ে কালাদিয়াসংলগ্ন বাদাবনের উঁচু জায়গাটায় চলে এলাম। কালাদিয়ার একচিলতে জেগে থাকা চরে তখনো বেশ কিছু সৈকত পাখি বিচরণ করছিল। জোয়ারের পানি দ্রুত চরের মাটি গ্রাস করছে। খুব বেশি সময় নেই। কাজেই যতটা সম্ভব ডুবন্ত চরের কাছাকাছি গিয়ে শেষ দলটির উড়ে যাওয়া পর্যন্ত ফ্রেমের পর ফ্রেম ক্লিক করে গেলাম। চর ডুবে গেলে আবারও উঁচু জায়গাটায় এলাম। ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো দেখতে দেখতে উল্টো ঠোঁটের একটি পাখির অবয়ব ভেসে উঠল।
দুপুরে জোয়ারের পানি নামতে শুরু করলে কালাদিয়ার ডুবন্ত চর জাগতে শুরু করল। স্পিডবোট নিয়ে দ্রুত উদীয়মান চরের দিকে গেলাম। বেলা আড়াইটায় জোয়ারের পানি বেশ নেমে গেল। নতুন পলিপূর্ণ চরে নানা প্রজাতির সৈকত পাখির মেলা বসল যেন! দুর্লভ পাখি পীত পাথুরে বাটানের ছবি তুলতে তুলতে ক্যামেরার ফ্রেমে উল্টো ঠোঁটের সেই পাখিটি ঢুকে পড়ল। উড়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত শাটারে ক্লিক করে গেলাম। হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার পথে ২০১৬ সালে প্রথমবার পাখিটিকে দেখেছিলাম।
কালাদিয়া চরে দেখা উল্টো ঠোঁটের পাখিটি সুদূর সাইবেরিয়া থেকে প্রতি শীতে এ দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। কাসপিয়ান সাগরের পশ্চিমে চেচনিয়ার টেরেক নদীতে প্রথম দেখা যায় বলে পাখিটির নাম টেরেক স্যান্ডপাইপার। কোনো প্রচলিত বাংলা নাম নেই। তাই অনুবাদ নামেই ভরসা, উল্টোচঞ্চু বা উল্টোঠোঁটি চাপাখি। এ দেশে ওরা সচরাচর দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। গোত্র চ্যারাড্রিইডি, বৈজ্ঞানিক নাম Xenus cinereus, যার অর্থ ‘ছাই ধূসর রঙের আগন্তুক’। ওদের মূল আবাস ফিনল্যান্ড থেকে উত্তর সাইবেরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল তাইগা বা তুষারাবৃত বন।