ফুলবিজ্ঞানী ড. কবিতা-আনজু-মান আরা পাঁচ বছর ধরে এ দেশে টিউলিপ ফুল ফোটাচ্ছেন। অবশ্য সবই গবেষণার জন্য। গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই বিজ্ঞানী এ বছরও ফুটিয়েছেন নানা রঙের বাহারি টিউলিপ ফুল। সেই ফুল দেখতে তাঁর আমন্ত্রণে সেখানে গিয়ে প্রথম দেখা হলো দেশে ফোটা টিউলিপের সঙ্গে। আহা কী রূপ! টকটকে লাল, কমলা আর হলুদ রঙের ফুলগুলো যেন বাংলাদেশের মাটিতে তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। এর মানে এ দেশেও হিমদেশের টিউলিপ ফুল ফোটানো সম্ভব।
কবিতা-আনজু-মান আরা জানান, পাঁচ বছর আগে বিজ্ঞানী ড. আজিজ লন্ডন থেকে টিউলিপের ৫০টি কন্দ এনে তাঁকে দেন। সে বছরই লাগিয়ে তিনি প্রায় অর্ধেক গাছে ফুল দেখতে পেলেন। এরপর থেকেই লেগে পড়লেন গবেষণায়—কী করে এ দেশে টিউলিপের চাষ করা যায়। তিনি জানান, পরের বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপের প্রায় ১০০টি কন্দ নিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো তিনি বিএআরআইকে দেন। সেগুলো লাগিয়ে সেসব গাছেও ফুলের দেখা পেয়েছিলেন। প্রতিবছরই কিছু না কিছু টিউলিপের কন্দ বিদেশ থেকে আসে। সেগুলো লাগিয়ে তিনি ফুল ফোটানো ও গবেষণার কাজে লাগান।
গবেষণার ফলাফল হিসেবে এই ফুলবিজ্ঞানী বলেন, নানা দেশ থেকে ছয় রকমের টিউলিপ সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে কমলা রঙের টিউলিপের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ বেশি, মিষ্টি সুগন্ধও আছে, গাছও লম্বা। লাল ও হলুদ ফুলের সুগন্ধ নেই, গাছ খাটো। এ দেশে টিউলিপ চাষ করা সম্ভব। এ বছর গাজীপুরের কেওয়া দক্ষিণখান গ্রামের ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন নেদারল্যান্ডস থেকে এক হাজার কন্দ এনে এক শতক জমিতে চাষ করেছেন। সেসব গাছে অনেক ফুল ফুটেছে। দেশে কৃষকদের মধ্যে মাঠে তিনিই প্রথম টিউলিপচাষি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল মুঈদ এ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলাদেশেও টিউলিপ ফোটানো সম্ভব।
কবিতা-আনজু-মান আরা আরও বলেন, ‘জানুয়ারিতে টিউলিপের কন্দ লাগালে ভালো হয়। ফেব্রুয়ারিতে ফুল ফোটে। ফেব্রুয়ারিতে লাগানো গাছে এখন ফুল ফুটেছে। শীতকাল ছাড়া এর চাষ সম্ভব নয়। তা ছাড়া কন্দ লাগানোর আগে ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় দুই মাস কন্দকে রেখে হিমাবেশিত করতে হয়। মাটির তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে গেলে সেসব গাছে ফুল ফুটতে সমস্যা হয়। তাই বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতের সময় এর চাষ করা যেতে পারে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নীলফামারীর ফজিলাতুন প্রধানের (৬০) বাগানে টিউলিপ ফুল ফোটার খবর বেরিয়েছিল প্রথম আলোয়। উত্তরাঞ্চলে এ ফুল চাষ সম্ভব হয়ে উঠবে বলেই সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা।