টাঙ্গুয়ার হাওরের বিরল জলখেনি

চটাইন্না ও লেচুয়ামারা খালের সংযোগস্থলে জলখেনি। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি
ছবি: লেখক

খুব ভোরে সুনামগঞ্জ পৌঁছে মোটরসাইকেলে টাঙ্গুয়ার হাওরের দিকে রওনা হলাম। প্রায় দুই ঘণ্টা পর নামলাম টাঙ্গুয়ার গোলাবাড়ি ঘাটে। ‘হাওর বিলাস’ হোটেলের ঘাটে নোঙর করা বজরায় ব্যাগপত্র রেখে দ্রুত শিবলু মাঝির কোষানৌকায় উঠে বসলাম। রউয়া বিল পাড়ি দিয়ে চটাইন্না ও লেচুয়ামারা খালের সংযোগস্থলে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগল না। এক প্রজাতির দুর্লভ শাখাচারী পরিযায়ী পাখির খোঁজে এখানে এসেছি। কিন্তু দুর্লভ পাখিটিকে দেখার আগেই বিরল একটি পাখির দেখা পেয়ে গেলাম। ২৬ বছর আগে ওকে প্রথমবার দেখেছিলাম বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের সাতশৈয়া গ্রামে। সেবার ফিল্ম ক্যামেরায় ওর ছবি তুলেছিলাম।

আজ এত বছর পর পাখিটিকে দেখে কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লাম। পাখিটি আপনমনে খালের পাড়ের অল্প পানিতে নেমে শামুক খুঁজে খাচ্ছিল। আমাদের দেখে মোটেও বিচলিত হলো না। শিবলু মাঝি ধীরে ধীরে বইঠা মেরে সামনে এগোচ্ছেন; আর আমরা ক্যামেরায় ক্লিক করে যাচ্ছি। পাখিটির এত কাছে চলে এসেছি যে ওর পুরো ছবি ক্যামেরার ফ্রেমে আঁটছে না, তবু সে অবিচল। এত কাছ থেকে খুব কম পাখির ছবিই তুলতে পেরেছি। একসময় ওর একদম কাছে চলে আসায় পাখিটি সরে যেতে বাধ্য হলো। কিন্তু ভয় পেল না মোটেও। খানিক দূরে গিয়ে আবারও খাদ্য খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

জলপাই-বাদামি পালকের পাখিটি দেখতে বেশ মিষ্টি। পাখিটির মূল আবাস ইউরোপ, সাইবেরিয়া এবং মধ্য ও উত্তর এশিয়া। শীতে উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় পরিযায়ী হয়। তবে এ দেশে বেশ বিরল।

বিরল পরিযায়ী পাখিটির নাম জলখেনি বা অম্বকুক্কুট। ইংরেজি নাম Eastern Water Rail বা Brown-cheeked Rail। গোত্র-রেলিডি, বৈজ্ঞানিক নাম Rallus indicus। দেহের দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার ও প্রসারিত ডানা ৩৮ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির ওজন যথাক্রমে ৭৪ থেকে ১৩৮ ও ৮৮ থেকে ১৯০ গ্রাম।