বাড়ির উঠানে মাছ ধরছেন এক গৃহস্থ। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। গতকাল দুপুরে উপজেলার সাজিকান্দি এলাকায়।
বাড়ির উঠানে মাছ ধরছেন এক গৃহস্থ। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। গতকাল দুপুরে উপজেলার সাজিকান্দি এলাকায়।

জোয়ারের বন্যায় সাগরপারের এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

গত এক সপ্তাহ ধরে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে দেশের উপকূলীয় এলাকার অধিবাসীদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা কিছুটা ওঠানামা করলেও তা এখনো প্রতিদিনই উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করছে। এই প্লাবনকে ‘উপকূলীয় বন্যা’ বলছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই বন্যায় এরই মধ্যে এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উজানের নদী থেকে আসা বন্যার বিপদ প্রায় কেটে গেছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগর থেকে আসা ঝোড়ো হাওয়া ও প্রবল জোয়ারের বিপদ যেন থামছেই না। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, একটি লঘুচাপ মিলিয়ে যেতে না যেতে সাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এতে বঙ্গোপসাগর আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে। দমকা বাতাস ও ভারী বৃষ্টির আশঙ্কার পাশাপাশি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারে আবারও উপকূল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চলমান দুর্যোগ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে। সেখানে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কী ধরনের পুনর্বাসন ও পুর্নগঠন কর্মসূচি নেওয়া যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হবে। প্রাথমিকভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি মেরামত করে দেওয়া, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে গ্রামীন সড়ক মেরামত ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে গ্রামীণ টিউবওয়েলগুলো ঠিক করা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বাঁধগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বন্যার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব প্রায় শেষ করে এনেছি। তবে পুনর্বাসনের কাজ আমরা দ্রুত শুরু করব। এই সভায় এ ব্যাপারে মতবিনিময় হবে। ’

গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় চট্টগ্রাম, মোংলা , পায়রা বন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব নদী বন্দরে এক নম্বর বিপদসংকেত দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ জেলার উপকূলীয় এলাকা এবং দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে যে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে তা আগেরটির চেয়ে কিছুটা শক্তিশালী মনে হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি বাড়বে।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, বুধবার থেকে আবারও বৃষ্টি বাড়তে পারে। একই সঙ্গে দমকা হাওয়ার গতিও বেড়ে যেতে পারে।

গতকাল দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ছিল সাতক্ষীরায় ৭৮ মিলিমিটার। ঢাকায় সারাদিনে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য স্থানেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে।