ক্যাপস-এর গবেষণা

ছয় বছরে ৩৮ দিন ভালো বায়ু পেয়েছে রাজধানীবাসী

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা
ছবি: প্রথম আলো

গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করতে পেরেছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ সময়। এর মধ্যে ৫১০ দিন চলনসই মানের বায়ু, ৫৭৭ দিন সংবেদনশীল, ৪৪৩ দিন অস্বাস্থ্যকর, ৩৮৫ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩৭ দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে।

তথ্যগুলো রাজধানীর বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণায় উঠে এসেছে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মজুমদার। কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল এই পাঁচ বছরের থেকেও ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৭ শতাংশ। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সূচক ২১৯.৫৯ এসে দাঁড়িয়েছে, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান মজুমদার এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দৈনিক ২৪ ঘণ্টা ভিত্তিতে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের মান সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকে রাতে। বিকেল চারটার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে, যা রাত ১১টা থেকে ২টা সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। রাত তিনটার পর বায়ুর মান উন্নতি হলেও সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত আবার ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়। তবে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কম দেখা যায়।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপস বায়ুদূষণের প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আবহাওয়াজনিত ও ভৌগোলিক কারণ উল্লেখ করে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মানবসৃষ্টি কারণগুলোর মধ্যে নগর-পরিকল্পনার ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা অন্যতম কারণ।

ক্যাপস সম্প্রতি তাদের এক গবেষণার ভিত্তিতে বলছে, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ হয়, যা মোট দূষণের ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া ইটভাটা ও শিল্পকারখানায় ২৯ শতাংশ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ১৫ শতাংশ, আন্তর্দেশীয় বায়ুদূষণের ১০ শতাংশ, গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষণ ৯ শতাংশ, বর্জ্য পোড়ানো থেকে ৭ শতাংশ বায়ুদূষণ হয়।

প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বায়ুতে বস্তুকণার উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করছে বলে জানায়। এতে উঠে এসেছে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা। যেখানে প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম বস্তুকণা ছিল। পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা। এর পরের স্থানগুলো হচ্ছে পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি ৩২, সংসদ এলাকা, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ ও গুলশান-২।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণ রোধে ১৫টি সুপারিশ উপস্থাপন করে। সুপারিশগুলো ছিল পাঁচটি করে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ।

স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপগুলো হলো শহরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর পানি ছিটানো, ধুলা সংগ্রহে সাকশন ট্রাক ব্যবহার, নির্মাণকাজের সময় নির্মাণ স্থান ঢেকে রাখা, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ, ব্যক্তিগত-ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ।

মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো, জলধারা সংরক্ষণ, সাইকেল লেন, সিটি গভর্নেন্স প্রচলন।

দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হলো নির্মল বায়ু আইন ২০১৯ দ্রুত বাস্তবায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতায় বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ, বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন, গণমাধ্যমে বায়ুদূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য প্রচার, ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন, পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস ও পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করা।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। এ সময় বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্য এম এম সিদ্দিকী ও আবদুল্লাহ নাঈম।

সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। যখন আমরা কথা বলি সরকার নড়াচড়া করে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয় না।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ, নগরবাসীর অন্তত বায়ুদূষণের তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। মানুষকে বায়ুদূষণ সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব আমাদের না। এটা সরকারের দায়িত্ব, কিন্তু তারা তা করছে না।’