করোনায় ঘরবন্দী! তাই পাখি দেখতে যাওয়াও বন্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সিরাজুল ইসলামের বাসা জিগাতলায় আমার বাসার কাছেই। বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে তাঁকে ফোন করতেই বললেন, ‘৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব। যাবেন নাকি?’ আমি তো আগেই এক পায়ে খাড়া। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেই মনটা ভালো হয়ে গেল। ক্যাম্পাস সবুজ হয়ে গেছে। অনুষদের পেছনে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এলাকায় নিজের হাতে লাগানো কাঁঠালগাছের দিকে রওনা হতেই এক জোড়া জলপাই-সবুজ পাখি উড়ে যেতে দেখলাম। আশপাশে আরও বহু প্রজাতির পাখির কাকলি শুনে দীর্ঘদিনের বন্দী মন চাঙা হয়ে উঠল।
কাঁঠালগাছটির গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ৬৬টি কাঁঠাল ধরেছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছি। দেখি, জলপাই-সবুজ সেই পাখি-দম্পতি তীক্ষ্ণ স্বরে শব্দে ডাকতে ডাকতে পাশের গাছটির গা আঁকড়ে ধরল। এরপর লাফাতে লাফাতে গাছের ওপরের দিকে উঠে গেল। অসম্ভব উচ্ছল পাখি দুটি। এরা এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি—চিত্রিতগলা কাঠঠোকরা।
এই পাখি আরও নানা নামে পরিচিত। সবুজডোরা কাঠঠোকরা বা রেখাকণ্ঠ কাঠঠোকরা নামেও এদের ডাকা হয়। পশ্চিমবঙ্গে বলে সবুজ কাঠঠোকরা। ইংরেজি নাম স্ট্রিক–থ্রোটেড উডপেকার। বৈজ্ঞানিক নাম Picus xanthopygaeus। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এরা ছড়িয়ে আছে।
প্রাপ্তবয়স্ক হলে এই পাখির গড় দৈর্ঘ্য হয় ৩০ সেন্টিমিটার, ওজন ৮৩ থেকে ১১১ গ্রাম। মাথা আর পিঠ হলুদাভ-সবুজ। চোখের ওপর সুস্পষ্ট সাদা ভ্রু-রেখা আর অস্পষ্ট গোঁফের আভাস। গাল সবুজাভ-ধূসর। গলা আর ঘাড়ে গাঢ় জলপাই রঙের ছোপ ছোপ দাগ। পেটেও গাঢ় জলপাই রঙের আঁশের মতো। দেহতল ফ্যাকাশে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম।
জানুয়ারি থেকে জুন এদের প্রজননকাল। পূর্বরাগের সময় পুরুষ পাখি বাঁশ বা গাছের ফাঁপা ডালে চঞ্চু দিয়ে আঘাত করে ড্রামের মতো আওয়াজ তুলে স্ত্রী পাখিকে আকর্ষণ করে। গাছের ঊর্ধ্বমুখী শাখার নিচের দিকে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। আয়ুষ্কাল ৫-৬ বছর।