গরমও না, ঠান্ডাও না, স্বস্তি স্বস্তি ভাব

কয়েক দিন পর তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে আরও হ্রাস পেতে পারে
ফাইল ছবি

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অক্টোবরের মাঝামাঝি দেশে বেশ গরম অনুভূত হচ্ছিল। ভ্যাপসা গরমে কখনো কখনো হাঁসফাঁস অবস্থাও তৈরি হয়েছিল। বাতাসে সুপ্ত তাপ, জলীয় বাষ্পের আধিক্য ও বৃষ্টি না হওয়ায় এমনটা হয়েছিল বলে জানান আবহাওয়াবিদেরা। কিন্তু এখন আবহাওয়ার সেই অস্বস্তিকর অবস্থা অনেকটাই কেটে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ইতিমধ্যে দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমেছে। কয়েক দিন ধরে প্রায় অপরিবর্তিতভাবে ২২ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকছে। দিন ও রাতে স্বস্তির তাপমাত্রা বিরাজ করছে। দিনে মাঝেমধ্যে সূর্যের দেখা মিলছে না। আবার কুয়াশার দেখাও মিলছে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির পরই দেশে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ শুরু হয়েছে। সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতল বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে বিভক্ত হয়ে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে। এ বাতাস শুষ্ক। অর্থাৎ বাতাসে আর্দ্রতা কম। ফলে, কিছুটা ঠান্ডার অনুভূতি পাওয়া যায়।

কয়েক দিন পর নভেম্বরে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে আরও হ্রাস পেতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামের মাইজদী কোর্টে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়। বাকি এলাকাগুলোয় তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায়, ১৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে তা মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক বলে বিবেচিত হয়। এটা গরমও না, ঠান্ডাও না—এমন একটা অবস্থা। সময় গড়ালে এই তাপমাত্রা আরও কমবে।

নাজমুল হক আরও বলেন, ঢাকায় নভেম্বরে তাপমাত্রা থাকে ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ডিসেম্বরে থাকে ১৪ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে ‘কোল্ড ওয়েভ’ বা শ্বৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিকে বলা হয় শীতকাল। এই পুরো সময় দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস বর্ষার শেষ ও শীত শুরুর অন্তর্বর্তীকাল।

আবহাওয়াবিদেরা বলেন, এ সময় আকাশ বেশি মেঘলা থাকে বলে বায়ুতে আর্দ্রতা বেশি থাকে। সে হিসাবে এ সময় কিছুটা ঠান্ডা অনুভূত হলেও একে ঠিক শীতকাল বলা যাবে না।

এ সময় পুরোপুরি শীত না পড়ার আরেকটি কারণ হলো বায়ুপ্রবাহ স্থির নয়। অর্থাৎ এ সময়ে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আসে। আবার দক্ষিণাংশে পুবালি ও পশ্চিমা বায়ুও সক্রিয় রয়েছে। এসব বাতাসের সংযোগে দেশের দক্ষিণাংশে বৃষ্টি হয়।

আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, ২৭ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টির প্রবণতা থাকতে পারে। এই বৃষ্টি কেটে গেলে তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে।

নাজমুল হক বলেন, বৃষ্টি সমুদ্র থেকে জলীয় বাষ্প ভূমির দিকে উড়িয়ে আনে। এ কারণে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরমের অনুভূতিটা থাকে। বৃষ্টিপাত হয়ে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে তা দেশ অতিক্রম করলে আর্দ্রতা কমবে। তখনই শীতের অনুভূতি বেশি হবে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে এ অঞ্চলের মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা মিলে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার তৈরি হয়। তখন শীত অনুভূত হয়। শীত অনুভূত হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে সূর্যের হেলে পড়া।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, এখন সূর্য হেলে গেছে। এর অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার দূরে, অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি। ফলে, সূর্য এখন তির্যকভাবে আলো দিচ্ছে। এ কারণে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে।