কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা বিপৎসীমার ওপরে উঠে গেছে। আজ সকাল ১০টায় হার্ডিঞ্জ সেতু পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা ৮ সেন্টিমিটার বাড়ে।
যেভাবে পানির উচ্চতা বাড়ছে, তাতে এবার ১৬ বছরের রেকর্ড ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটারের ওপরে পরিমাপ করা হয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানির উচ্চতা বেড়েছিল। তারও আগে ১৯৯৮ সালে একবার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছিল ১৫ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার।
এদিকে পানি ক্রমেই বাড়তে থাকায় গড়াই নদের পানি ফুলে উঠেছে। এতে কুষ্টিয়ার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। সকাল ছয়টায় গড়াইয়ে কুমারখালী রেলসেতু পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। গড়াইয়ের বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পদ্মার পাশাপাশি শাখা গড়াই নদেও পানি বেড়ে যাচ্ছে। পদ্মা ও গড়াইসংলগ্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরেও পানি প্রবেশ করেছে।
আগে থেকে বন্যাকবলিত দৌলতপুর উপজেলার দুই ইউনিয়নে সরকারিভাবে সহায়তা দিতে ঢাকা থেকে ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার জেলায় পৌঁছেছে। আজ চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, রাতের বেলায় পানি বাড়ার হার বেশি হচ্ছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ৮ সেন্টিমিটার বাড়ে।
গড়াইয়ের পানি বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন জিকে ঘাট এলাকায় বেশ কিছু বাড়ির ভেতর পানি ঢুকে গেছে। বাড়ির বাসিন্দারা শহরের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
বন্যাকবলিত দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৫ গ্রাম এখনো প্লাবিত। পানির স্রোত ও উচ্চতা প্রতিদিনই বাড়ছে।
মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকায় কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ৫০০ গজের মধ্যে পদ্মার পানি উঠে গেছে। পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে মহাসড়কের কাছে চলে আসতে পারে বলে এলাকাবাসীর আশঙ্কা। এ ছাড়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ও কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধসংলগ্ন দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে দ্রুত প্রতিরোধ করা না গেলে বাঁধ হুমকিতে পড়তে পারে।
শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দীন খান বলেন, শিলাইদহ, কোমরকান্দি ও কল্যাণপুর এলাকায় মাঠ ও কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। পানি না কমলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধ ও পয়েন্টে পাউবোর কর্মকর্তারা নজর রাখছেন।