কক্সবাজারে বনের জায়গায় প্রশিক্ষণ একাডেমি নয়: সংসদীয় কমিটি

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে এই বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কলাতলীর শুকনাছড়ি এলাকায়  
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে রক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের বিরোধিতা করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে ওই প্রকল্পের চূড়ান্ত ছাড়পত্র না দেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা। সংসদীয় কমিটি বলেছে, তারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের বিরোধী নয়, তবে সেটি রক্ষিত বনভূমির জায়গায় করা যাবে না।

রক্ষিত বনভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর রক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গা গত জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বন্দোবস্ত দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি ওঠে। আজ রোববার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় জানায়, বন্দোবস্ত দেওয়া জায়গা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বনায়নকৃত পাহাড়ি এলাকা। পাহাড়ের উচ্চতা স্থানভেদে ২০ থেকে ২০০ ফুট। এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০০ একর সৃজিত বাগান রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ওই এলাকা হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল। ওই এলাকায় প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, রক্ষিত বনভূমি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দেওয়া সমীচীন নয় বলে মনে করে বন অধিদপ্তর।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জায়গাটি বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র না দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে একমত। এখন যেখানে বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করা হচ্ছে, সেখানে সরকারের আরেকটি সংস্থা যদি বনের জমি নিয়ে নেয়, সেটা ঠিক না।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, হয়তো ভূমির আকার ও প্রকৃতি বর্ণনা না করে শুধু জমির দাগ ও খতিয়ান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে প্রকল্পটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, ‘জনপ্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে আমরা সমর্থন করি। তবে ওই জায়গায় এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আমাদের বিধি–নিয়ম, এমনকি এটা সংবিধান পরিপন্থী। এটা অন্য জায়গায় হোক।’

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এই জায়গা ১৯৩৫ সালে রক্ষিত বনভূমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়, ১৯৮০ সালে এটিকে জাতীয় উদ্যান এবং ১৯৯৯ সালে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) ঘোষণা করা হয়। এখানে কোনো স্থাপনা না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এসব কারণে এখানে প্রশিক্ষণ একাডেমি করার সুযোগ নেই বলে মনে করে সংসদীয় কমিটি।

সাবের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও মো. শাহীন চাকলাদার অংশ নেন।