গায়ে সাদার সঙ্গে গোলাপি রঙের আস্তরণ। দাড়ি সদৃশ পালক ঝুঁকে পড়েছে ঘাড় অবধি। ফুলেফেঁপে থাকা পালকের জন্য মাথা ও ঠোঁটের নাগাল পাওয়া দায়! পাখা নেড়ে নেড়ে বাকবাকুম ডাক তোলে আশপাশ জমিয়ে রাখা অনিন্দ্যসুন্দর এই কবুতরের নাম জ্যাকোবিন। সৌন্দর্যে পিছিয়ে নেই হাউস পিজিয়নও। মাথায় ছোট্ট ঝুঁটি। পায়ের কাছে ফুলের মতো ফুটে আছে পালক। গায়ের পুরোটাই ধবধবে সাদা। দর্শনার্থীদের ক্যামেরার ক্লিক ক্ষণে ক্ষণে খুঁজে ফিরছিল ‘তাদের।’
শুধু এ দুই প্রজাতির কবুতর নয়। আরও ছিল সিরাজি লাহোর থেকে ইউরোপিয়ান লাহোর। বোকারা থেকে ময়ূরপঙ্খি। কিং থেকে হেলমেট। নানা নামের, নানা প্রজাতির, নানা রঙের পায়রার এই প্রদর্শনী হলো গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে। ‘হিংসা নয় বিভেদ নয়, শান্তির প্রতীকে যেন শান্তি হয়’ স্লোগানে চিটাগং হাই ফ্লাইয়ার জোন নামের একটি সংগঠন নগরের দেওয়ানহাট মোড়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে অন্তত ৮০ প্রজাতির কবুতর প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীর পাশাপাশি চলে কবুতর বেচাকেনাও।
গতকাল বিকেলে প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট জায়গাটিতে গিজ গিজ করছে মানুষ। লোহার খাঁচায় বন্দী কবুতরগুলোর সঙ্গে কেউ কেউ ছবি তুলছেন। কেউবা ছুঁয়ে দেখছেন। এর সঙ্গে চলছিল বেচাকেনাও। প্রদর্শনীর শুরুতে দশটি পায়রা উড়িয়ে দেওয়া হয় আকাশের পানে।
বাড়ির মালিকের কাছে কবুতর দেখে শখ জাগে ১৪ বছরের কিশোর মেহেদী হাসানের। এরপর ২০১৫ সালে বাসার বেলকনিতে গড়ে তোলে ‘কবুতরের রাজ্য।’ বর্তমানে তার কাছে নয় প্রজাতির কবুতর রয়েছে। পাঁচ প্রজাতির কবুতর প্রদর্শনীতে নিয়ে আসে সে।
নুরুল হুদা নামের আরেক তরুণ প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছেন হাউস পিজিয়ন, সিরাজি লাহোর, ইউরোপিয়ান লাহোর, বোকারা ও কাইট প্রজাতির কবুতর। এর মধ্যে এক জোড়া হাউস পিজিয়ন ও ইউরোপিয়ানের দাম ২৫ হাজার টাকা করে।
দুই শিশুকন্যা স্নেহা বিনতে নাউমি ও সায়রা সুলতানাকে নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন গৃহবধূ তনিমা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েরা খুব কবুতর ভালোবাসে। তাই তাদের নিয়ে ছুটে এলাম। এসে ছয় হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া জ্যাকোবিনও কিনলাম। এতে মেয়েরা খুব খুশি এখন।’
২০১৩ সাল থেকেই পায়রা প্রদর্শনী করে আসছে চিটাগং হাই ফ্লাইয়ার জোন। ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে প্রতিবছর এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সংগঠনটির উপদেষ্টা শাকিল মোহাম্মদ ইসরাত হোসেন ও সভাপতি কায়সার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, পায়রা বিক্রি শুধু শখ নয়, এটির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহও সম্ভব। এটি আমরা সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে চাই।’