গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের কয়েকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল ডুবেছিল। দুই দিনের মাথায় ওই পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে যায়, সেই সঙ্গে বন্যাও চলে যায়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে লালমনিরহাটে তিস্তা এবং ময়মনসিংহে কংস ও সোমেশ্বরী নদীর পানি ফুলেফেঁপে ওঠে। দুকূল ছাপিয়ে কয়েক শ গ্রাম প্লাবিত করে। আজ রোববার সকালের মধ্যেই সেই পানি আবার নেমে গেছে। এভাবে বড় বন্যা শুরুর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ আসা পাহাড়ি ঢল থেকে বন্যা শুরু হয়ে গেছে।
সাধারণত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অস্থায়ী বন্যা হয়। আর এপ্রিল-মে মাসে হাওরে পাহাড়ি ঢল থেকে বন্যা হয়। এবার হাওরে বন্যা হয়নি। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকেই দেশের বিভিন্ন নদীর পানি বাড়লেও বড় নদীগুলোর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
তবে কোথাও কোথাও পাহাড়ি ঢলে সে দু-এক দিনের জন্য বসতি এলাকাগুলোকে প্লাবিত করে ফেলছে। বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঢলকে সাধারণ বন্যা বলা হয় না। কারণ, এগুলোর স্থায়ীত্বকাল এক থেকে তিন দিন। এগুলো মূলত ঢল থেকে কোনো এলাকা প্লাবিত হওয়া। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মেঘনা ও পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে তা মাঝারি বন্যা সৃষ্টি করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এবার শুরু থেকেই মৌসুমি বায়ু বেশ শক্তিশালী। যে কারণে বাংলাদেশের উজানে ভারতীয় অংশে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। বাংলাদেশেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ফলে কোথাও কোথাও উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে দু–এক দিনের জন্য প্লাবিত হচ্ছে। তবে এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জুনের শেষে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকায় বন্যা শুরু হতে পারে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র অনুযায়ী, এক সপ্তাহ ধরে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ১০১টি পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৬০টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ৪৪টি পয়েন্টে পানি কমেছে।
বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় প্রতিদিনই ৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতরেও প্রতিদিনই একই মাত্রার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে পাহাড়ি ঢল নদীর দুকূল উপচে বন্যা এবার আগেভাগেই শুরু হয়ে যেতে পারে বলে বন্যা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।