ইলিশের গড় ওজন ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে

বাজারে বিক্রির জন্য বড় ইলিশ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছের আড়তে। ছবি: প্রথম আলো
বাজারে বিক্রির জন্য বড় ইলিশ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছের আড়তে।  ছবি: প্রথম আলো

দুই বছর ধরে দেশে বড় ইলিশের পরিমাণ দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। আগে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বাজারে খুব কমই দেখা যেত। দামও মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে ছিল না। এখন বাজারে প্রচুর পরিমাণে বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশে ইলিশের ওজন ও আকার বাড়ছে।

সাগর ও নদ-নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন গত তিন বছরে ৩৫০ গ্রাম বেড়েছে। গত তিন মাসে সাগর ও নদীতে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ গ্রাম। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মাছবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

শুধু আকার ও ওজন নয়, এবার ইলিশের মোট উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছে মৎস্য অধিদপ্তর। সংস্থাটির হিসাবে, গত বছর দেশের ইলিশ এর আগেরবারের সব রেকর্ড ভেঙে ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে দাঁড়িয়েছিল। এবার তা আরও বেড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা, যা বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশের পরেই ভারতের অবস্থান। তারা বিশ্বের মোট ইলিশের ১০ শতাংশ আহরণ করে থাকে। বাকি ইলিশ আসে মিয়ানমারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।

২০১৬ সালে মোট ইলিশের ৩ শতাংশের ওজন ছিল এক কেজির ওপর। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৫ শতাংশে। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যত ইলিশ ধরা পড়েছে, তার ১০ শতাংশের ওজন এক কেজির ওপরে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএওর দ্য স্টেট অব ফিশ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার, ২০১৮–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। দুই বছর আগে প্রাকৃতিক উৎসের মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান ইলিশের।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এত দিন দেশে ইলিশের প্রজননের জন্য চারটি অভয়াশ্রম ছিল। চলতি বছরের মার্চ থেকে এ সংখ্যা বেড়ে পাঁচটি হয়েছে। বরিশালের হিজলা থেকে মেহেন্দিগঞ্জ পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৩১৮ কিলোমিটার এলাকাকে সরকার গত মার্চ থেকে অভয়াশ্রম হিসেবে কার্যকর করে। এ ছাড়া চলতি বছর বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করায় ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ফলে এ বছর দেশে বড় ইলিশের সংখ্যাও বেড়েছে।

সাগরে এখন ধরা পড়ছে বড় আকারের ইলিশ। জালে এসব ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি জেলেরা। ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে। ছবি: সৌরভ দাশ

ইলিশ বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা বলছেন, দেশের মৎস্য খাতের অন্যতম সাফল্য হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যাওয়া। ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা বন্ধ করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। একটি জাটকা অর্থাৎ ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ একবার সাগরে গিয়ে ফিরে আসার জন্য ছয় মাস সময় নেয়। এই সময়ের মধ্যে ইলিশের ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম বেড়ে যায়।

গত তিন মাসে চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে ধরা পড়া ইলিশের আকৃতি এবং ওজন নিয়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছে ওয়ার্ল্ড ফিশ, বাংলাদেশ। তাতে দেখা গেছে, মোট ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে ১৬ শতাংশের ওজন এক কেজির ওপরে। আর ৭০ শতাংশ ইলিশের ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি। আর জাটকা ধরা পড়ছে মাত্র ১৪ শতাংশ। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ওই এলাকায় ধরা পড়া ইলিশের অর্ধেকই ছিল জাটকা।

ওয়ার্ল্ড ফিশের সমীক্ষায় এবারের ইলিশের দামের একটি চিত্রও উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, বর্তমানে ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ গড়ে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেড় কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকা। তিন থেকে চার বছর আগে এক কেজি ওজনের একেকটি ইলিশ দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন পর্যন্ত মোট ধরা পড়া ইলিশের প্রায় অর্ধেকই সাগরের ইলিশ।

ওয়ার্ল্ড ফিশ, বাংলাদেশের ইকো ফিশ প্রকল্পের প্রধান আবদুল ওয়াহাব বলেন, দেশে ইলিশের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সাগর ও নদীতে অন্য মাছের পরিমাণও বাড়ছে। কারণ, সাগর ও উপকূলীয় নদীর মাছের সবচেয়ে প্রিয় খাবার জাটকা। এবারের ইলিশে আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল রং পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ এই ইলিশের স্বাদ ও পুষ্টিমান বেশি। ইলিশের শরীরে থাকা তেল উচ্চ রক্তচাপ ও বাতের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।