গাছটিতে সবে ফুল ধরেছিল। ফি বছরের মতো এবারও ছড়াতে শুরু করেছিল সৌন্দর্য। কিন্তু বাধ সাধল গাছটির বয়স, মূলে জীবাণুর আক্রমণ ও মাটির দুর্বলতা।
গত বুধবার বেলা সোয়া একটার দিকে গাছটি মূলসহ উপড়ে পড়ে। লন্ডভন্ড হয়ে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে গাছটির ভাঙা ডালপালা, ডালে থাকা পাখির বাসা আর কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্তিম সৌন্দর্য।
একদিন মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলে দাঁড়ানো কৃষ্ণচূড়াগাছটি আবার মাটিতেই লুটিয়ে পড়ে যেন শোধ করল নিজের জন্মের দায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের অংশে থাকা কৃষ্ণচূড়াগাছটি অনেক বছর ধরে সৌন্দর্য ছড়িয়ে আসছিল। গাছটির ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আসছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-দর্শনার্থীরা। তাঁদের অনেককেই বিগত বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সৌন্দর্যের প্রশংসা করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের ছাদ থেকে তোলা ছবিতে গাছটি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আবহ তৈরি করত। আশপাশের সবুজ গাছগাছালির বুকে এক খণ্ড লাল হয়ে ফুটে থাকত কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো। এ ছাড়া গাছ থেকে মাটিতে ঝরে পড়া ফুলও অপার সৌন্দর্য হয়ে ধরা দিত।
এই অঞ্চলে এপ্রিল থেকে জুনে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরের গাছটিতে ফুল ধরেছে মাসখানেক হয়েছে। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে গাছটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
গত বুধবার দুপুরে হঠাৎ গাছটি যখন উপড়ে গেল, ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। ফলে ফাঁকা হয়ে গেছে গোটা ক্যাম্পাস। জনবলের ঘাটতি থাকায় বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার গাছটি মাটিতে পড়ে থাকে তার ভগ্ন শরীর নিয়ে।
আর সৌন্দর্য ছড়াবে না মল চত্বরের কৃষ্ণচূড়াগাছটি। তার জায়গায় হয়তো নতুন কোনো কৃষ্ণচূড়াগাছ আসবে। পূরণ করবে এই চত্বরে তার শূন্যতা। কিন্তু সে জন্য নতুন গাছ রোপণ, তার বৃদ্ধি ও ফুল ফোটার অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকে।
বুধবার দুপুরে গাছটি যখন উপড়ে পড়ে, তখন আশপাশে কেউ ছিলেন না বলে জানান পার্শ্ববর্তী রেজিস্ট্রার ভবনের একজন নিরাপত্তাকর্মী। তিনি বলেন, বেলা সোয়া একটার দিকে হঠাৎই কৃষ্ণচূড়াগাছটি উপড়ে পড়ে। এ সময় কেউ নিচে থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
উপড়ে পড়া কৃষ্ণচূড়াগাছটির বয়স কমপক্ষে ৫০-৬০ বছর বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গাছপালার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আরবরি কালচার সেন্টারের পরিচালক মিহির লাল সাহা। গাছটি উপড়ে পড়ার পেছনে অন্তত তিনটি কারণ দেখছেন তিনি। এগুলো হলো—মাটির গঠন–প্রকৃতি, গাছের দীর্ঘ বয়স ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের এই অধ্যাপকের ভাষ্য, ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোর বেশ বয়স হয়েছে। বয়স হলে এই গাছের মূলব্যবস্থা (শিকড়) অতটা শক্তিশালী থাকে না। এ ছাড়া কিছু কিছু অণুজীব গাছের মূলব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে। কৃষ্ণচূড়ার মূলব্যবস্থার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা একটু দুর্বল থাকে। একটা বয়সের পর মানুষের যেমন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, গাছের ক্ষেত্রেও তাই হয়। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেলে গাছের শিকড়ে কিছু রোগ উৎপাদনকারী জীবাণু আক্রমণ করে। এই আক্রমণে শিকড় দুর্বল হয় যায়।
মিহির লাল সাহা আরও বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। আজ শুক্রবার উপড়ে পড়া গাছটি অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।