জলবায়ু সম্মেলন

অগ্রাধিকারের ৪ বিষয়ে গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ

ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে পৃথিবীর সুরক্ষা আর উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোসহ বেশ কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি বিবেচনা করে বাংলাদেশ। তাই অনুষ্ঠেয় জলবায়ুবিষয়ক ভার্চ্যুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে নিজেদের অগ্রাধিকারের চারটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সম্মেলনে আগামী শুক্রবার ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বের ৪০ জন শীর্ষ নেতার একজন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতিত্ব করা দেশের প্রধান হিসেবে অন্য ৪৭ দেশের আকাঙ্ক্ষার কথাও তুলে ধরবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনেন বাইডেন। এর কয়েক দিন পর তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জোরালো পদক্ষেপ যে জরুরি এবং এর অর্থনৈতিক সুফল রয়েছে সম্মেলনে বিশ্বনেতারা এটাই তুলে ধরবেন। এ বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আগে বাইডেন আহূত শীর্ষ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২২ ও ২৩ এপ্রিল (বাংলাদেশ সময় ২৩ ও ২৪ এপ্রিল) এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁখো, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রমুখ এতে যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানাতে জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি ঢাকায় এসেছিলেন ৯ এপ্রিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার জানান, সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চারটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে অবিলম্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য পূরণ, জলবায়ু তহবিলের ১০০ কোটি বিলিয়ন ডলার সমানভাগে ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ করা, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সৃজনশীল প্রকল্পে প্রধান অর্থনীতির দেশ এবং আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বিনিময়।

পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও প্রযুক্তি বিনিময় বলতে বাংলাদেশ কী বলেত চায়—এমন এক প্রশ্নের জবাবে এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্প্রতি ৪০টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ডিজেলচালিত রেলইঞ্জিন কিনেছে বাংলাদেশ। এই ইঞ্জিনগুলো অতীতের তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশ ও জ্বালানিবান্ধব। কাজেই ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব বাহনের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক গাড়ি অন্যতম প্রধান বাহন। কাজেই এই বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদন, বৈদ্যুতিক গ্রিডের সংযোগ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ—এসব বিষয়ে সহযোগিতা চায় যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের সাফল্য রয়েছে। আর বাংলাদেশ এখন সিভিএফের সভাপতি। তাই বাংলাদেশের নিজের এবং সিভিএফের অন্য ৪৭ দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরবে।

মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, বিশ্বে ১০০ কোটি বিলিয়ন ডলারের যে জলবায়ু তহবিলের কথা বলা হয়েছে, তার অর্ধেকটা ঝুঁকি প্রশমন ও বাকি অর্ধেক অভিযোজনের জন্য বরাদ্দ করা প্রয়োজন বলে মনে করে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা সফলভাবে করতে হলে ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনে যৌক্তিক ভারসাম্য আনার বিষয়টি বাংলাদেশ এই সম্মেলনে তুলে ধরবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিনিময়, সৃজনশীল প্রকল্পে অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো সামনে আনবে।