শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেন বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেন বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা

শাহবাগে শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সমাবেশ, প্রতিটি হত্যার বিচার দাবি

‘রাষ্ট্র সংস্কার, সংস্কৃতির সংস্কার’-এ আহ্বান জানিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ করেন বিভিন্ন মাধ্যমের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। সমাবেশ থেকে প্রতিটি হত্যার বিচার দাবি করা হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে এই সমাবেশ হয়। সেখান থেকে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় যুক্ত সবাইকে নিজেদের চর্চা অব্যাহত রেখে দল–মত ও ধর্মের নামে আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সংস্কারে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।

দৃশ্য-আলোকচিত্র-পারফরম্যান্স-সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, সংস্কৃতিসেবী ও সংগঠকদের সংগঠন ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে এ সমাবেশ থেকে বলা হয়, বিপুলসংখ্যক তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও গণমানুষের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসনবিরোধী গণ-আন্দোলনের বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ গণ-আন্দোলনের যে অভিপ্রায় ছিল, রাষ্ট্র-সমাজ-সংস্কৃতিতে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই দায়িত্ব নিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের ওপর জনসাধারণের আস্থা রয়েছে। শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর নজর রাখবেন। কোনো অনৈতিক বা অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ড হতে দেওয়া যাবে না।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী ও কিউরেটর মোস্তফা জামান বলেন, ‘২ আগস্ট ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতিবাদী সমাবেশ ও শিল্প সৃষ্টির আয়োজনের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এ সংগঠনের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে আমরা অনেক নতুন স্লোগান, সংগীত ও শিল্পকর্মের মতো সৃজনশীলতা পেয়েছি। এই আন্দোলন অন্যায়ের প্রতিবাদে সাহসিকতার পাশাপাশি সৃজনশীলতায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এ থেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা লাভ করেছি। এগুলো আমাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে।’

সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি অরূপ রাহী। ঘোষণাপত্রে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার ও শহীদদের নামাঙ্কিত স্মারক নির্মাণের দাবি এবং ভাস্কর্য ভাঙার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। সংবিধান, প্রতিনিধিত্ব, আমলাতন্ত্র, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি জানানো হয় এ ঘোষণাপত্রে।

সমাবেশে অরাজকতা প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান বক্তারা। তাঁরা বলেন, দেশে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে এবং সেগুলো দলীয়করণমুক্ত রাখতে হবে। দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সমাবেশ থেকে গণমানুষের শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আজ ছিল শিল্পীর জন্মদিন। উদ্যোক্তারা জানান, জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁরা বছরজুড়ে বিস্তারিত কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠক শেহজাদ চৌধুরী, আলোকচিত্রী আমিনুল হক, মুনেম ওয়াসিফ, সংগীতশিল্পী বিথি ঘোষ, অমল আকাশ ও চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান।

এদিকে এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের পাশেই ‘শূন্য সহনশীলতা’ নামে তরুণ শিল্পী নাফিউজ্জামান নাফির উন্মুক্ত একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা অর্ধশত শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীটি আজ সারা দিন চলবে।