আলোকচিত্রে করোনা মহামারির ক্ষত তুলে ধরলেন উজান রহমান

রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে করোনা মহামারিবিষয়ক একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: খালেদ সরকার

জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী হলে ঢুকে দেখা গেল কাঠের একটি কফিন। কফিনের পেছনের দেয়ালে ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে নানা বিষয়। আর হলের চারপাশের দেয়ালে সাজানো ফাঁকা সড়ক, মাস্ক মুখে মানুষের উদ্বেগ, হাসপাতালে ভিড় এবং মা ও সন্তানের বন্ধনসহ নানা ছবি। এভাবেই প্রতীকী কফিন আর ছবিগুলোর মাধ্যমে করোনা মহামারির কিছু খণ্ডচিত্র ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন উজান রহমান। ‘অ্যাবিস ইন অ্যাবজেকশন’ শিরোনামে শিল্পীর এটি প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রদর্শনী ঘুরে দেখার ফাঁকে টেরাকোটা ক্রিয়েটিভসের শিল্পী উজান রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কফিনটি করোনার প্রতীকী অর্থে রাখা হয়েছে। জানালেন, করোনার সময় তিনি বিদেশে ফটোগ্রাফি বিষয়ে পড়তে গিয়েও ঘরবন্দী ছিলেন। প্রদর্শনীর ছবিতে নিজের স্ত্রী ও সন্তানের ছবিও রেখেছেন। লকডাউনের সময় দেশে এবং বিদেশে থাকার সময় তাঁর যে উপলব্ধি ছিল, তাই আলোকচিত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

জাতীয় জাদুঘরে টেরাকোটা ক্রিয়েটিভস আয়োজিত এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি। আজ ছিল সমাপনী দিন। ‘আর্ট ইন দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে প্রদর্শনীর সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। প্রদর্শনীতে ছিল বাংলাদেশের ৫৩টি, যুক্তরাজ্যের ৬৮টি এবং তুরস্কের একটিসহ মোট ১২২টি আলোকচিত্র। প্রদর্শনীতে আসা দর্শকেরাও ছবিগুলো দেখার সময় করোনায় নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেন।

আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ফটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পায়নি। চারুকলা ইনস্টিটিউটে বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফটোগ্রাফির জন্য আলাদা কোনো বিভাগ নেই। আলোকচিত্র যে শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম, তার প্রমাণ করোনা নিয়ে এ প্রদর্শনী। করোনার যে ভয়াবহতা, তার স্থায়ী ছাপ রেখেছে ছবিগুলো। শিল্পী বিষয়ের গভীরে গিয়ে ছবিগুলো তুলেছেন।

আলোচনায় পাঠশালা দক্ষিণ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রভাষক জান্নাতুল মাওয়া করোনার পর নিজের জীবন পাল্টে যাওয়ার কথা বললেন। জানালেন, অভিমান করে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছিলেন। করোনায় বাবা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেছেন। শিল্পী উজান রহমানের ছবি জীবনের সেই গল্পগুলোই বলছে। শিল্পীর ছবিগুলো বহু বছর পরেও মনে করিয়ে দেবে করোনার ভয়াবহতার কথা।

আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল

চারুপীঠ শিল্প গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী মাহবুব জামান শামীম বলেন, আলোকচিত্র সময়কে ধরে রাখার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। করোনা যেমন অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, তেমনি কিছু দিয়েছেও। করোনার সময় সবাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছে। চারপাশের বিশুদ্ধ বাতাস, সজীব প্রকৃতির দেখা পেয়েছে।

আলোচনা সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন আলোকচিত্রী আরশাদ রণ। এ সময় টেরাকোটা ক্রিয়েটিভসের পরিচালক মৃত্তিকা কামালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।