সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ

কয়েক বছর আগে ভবনটি ৩ তলা থেকে ৭ তলা করা হয়

মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে সাততলা এই ভবনে বিস্ফোরণ হয়
 ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে যে ভবনে মঙ্গলবার বিস্ফোরণ হয়েছে, একসময় সেটির ঠিকানা ছিল ১৮০/১ নর্থ সাউথ সড়ক। তবে বর্তমান ঠিকানা ৬ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি। ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে একসময় হোটেল ক্যাফে কুইন নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল। তখন ভবনটি ছিল তিনতলা। নিচতলার পেছনের অংশে ছিল রেস্তোরাঁর বাবুর্চিখানা (রান্নার ঘর)। ভবনমালিক মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলেরা সেখানে আরও চারতলা নির্মাণ করেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে ভবনটি সম্পর্কে এসব তথ্য জানা যায়। তাঁরা জানান, গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় ক্যাফে কুইন বিখ্যাত ছিল। বিশেষ করে হোটেলটির পরোটার খ্যাতি ছিল। আন্ডারগ্রাউন্ডে ক্রেতাদের খাবার পরিবেশন করা হতো। অনেকে এ হোটেল থেকে খাবার কিনেও নিয়ে যেতেন।

সাততলা ওই ভবনের পেছনের এলাকাটি স্পঞ্জের গলি (জুতার দোকান) নামে পরিচিত। ওই এলাকায় থাকা ১৬০ নম্বর ভবনের মালিক নুর হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি জানান, ১৯৮৫-৮৬ সালে ভবনের সামনের রাস্তাটি নর্থ সাউথ সড়ক নামকরণ করা হয়। এরও কয়েক বছর পর সেখানে তিনতলা (বর্তমানে সাততলা) ভবন নির্মাণ করা হয়। শুরুতে নিচতলা ফাঁকা ছিল। কোনো মার্কেট বা দোকান ছিল না। আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল কুইন হোটেল। রান্না হতো নিচতলার পেছনের অংশে।

গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় ক্যাফে কুইন বিখ্যাত ছিল। বিশেষ করে হোটেলটির পরোটার খ্যাতি ছিল। আন্ডারগ্রাউন্ডে ক্রেতাদের খাবার পরিবেশন করা হতো। অনেকে এ হোটেল থেকে খাবার কিনেও নিয়ে যেতেন।

নুর হোসেন বলেন, ‘ভবনটির মালিক ছিলেন রেজা নামের এক ব্যক্তি। তাঁকে আমরা শুধু ওই একটি নামেই চিনতাম। তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। অন্য দুজন এ ভবনেই থাকতেন। তাঁদের একজনের নাম ওয়াহেদ, আরেকজনের নাম মতি।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভবনটির মালিক রেজা প্রায় এক যুগ আগে মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলেরা সেখানে আরও চারতলা নির্মাণ করেন। ভবন সাততলা হয়েছে প্রায় সাত-আট বছর আগে। এরপর নিচতলায় দোকান ভাড়া দেওয়া হয়। ভবনের বেজমেন্ট এসব দোকানের গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

বিকট শব্দে ভূমিকম্পের মতো আমার ঘর কেঁপে ওঠে। এতে থাই দরজা ভেঙে গেছে।
—মোস্তফা কামাল, বিস্ফোরণ হওয়া ভবনের কাছের এক ভবনের মালিক

সরেজমিন দেখা যায়, সাততলা ওই ভবনের তিনতলার দেয়ালে এখনো মোজাইক করা ‘হোটেল ক্যাফে কুইন’ নামের একটি লেখা রয়েছে। নিচতলায় ছিল মেসার্স সুজুতি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং) প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। নিচতলায় ছিল স্যানিটারি পণ্যের আটটি দোকান।

বিস্ফোরণে সাততলা ভবনের পাশের পাঁচতলা একটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাততলা ভবনটির চারতলাজুড়ে ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের গুলিস্তান শাখা। বিস্ফোরণে ভবনটির চারতলার সামনের অংশের কাচ ভেঙে গেছে। এর পেছনে ১৭২/১ নম্বরের ভবনের মালিক মোস্তফা কামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একসময় ব্র্যাক ব্যাংকের ভবনের পাশের সাততলা ওই ভবন ছিল তিনতলা। সেখানে একটি রেস্তোরাঁ ছিল। যেটির নাম ছিল হোটেল ক্যাফে কুইন। ১৮–২০ বছর আগে রেস্তোরাঁটি বন্ধ হয়ে যায়।

দুর্ঘটনার সময়ের বর্ণনায় মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিকট শব্দে ভূমিকম্পের মতো আমার ঘর কেঁপে ওঠে। এতে থাই দরজা ভেঙে গেছে।’ তিনি ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন।