সচিব করতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহাবুবুর রহমানকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শাজাহান খান।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে গত ৬ জুন মোজাম্মেল হক এবং ৪ জুলাই শাজাহান খান চিঠি দুটি দেন। দুজনেই চিঠিতে মাহাবুবুর রহমানের প্রশংসা করেন।

শাজাহান খান লিখেছেন, মাহাবুবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। ট্রাস্টের প্রতিটি শিল্প/বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন, লাভজনক করেছেন। মাহাবুবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য।

আমি নিজে আগ্রহী হয়ে তাঁকে সচিব করতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে ডিও দিয়েছি। তিনি সেখানে ভালো কাজ করেছেন। সে জন্য তাঁর নামে সুপারিশ করেছি। তবে পদোন্নতি হতেই হবে, তা-ও নয়
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক

মাহাবুবুর রহমান সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীকে সচিব পদে পদোন্নতি দিতে মন্ত্রী ও একজন সংসদ সদস্যের আধা সরকারি পত্র দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সচিব পদে পদোন্নতি দিতে এভাবে আধা সরকারি পত্র দেওয়া বিধিসম্মত নয়, সেটা মন্ত্রী দেন, আর সংসদ সদস্য দেন।

সচিব পদে পদোন্নতি দিতে বিভিন্ন সময় কোনো কোনো মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন। সম্প্রতি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর দেওয়া একটি পত্রও পাওয়া গেছে, যেখানে তিনি এক কর্মকর্তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

মাহাবুবুর রহমানকে সচিব পদে পদোন্নতি দিতে আধা সরকারি পত্র দেওয়ার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজে আগ্রহী হয়ে তাঁকে সচিব করতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে ডিও দিয়েছি। তিনি সেখানে ভালো কাজ করেছেন। সে জন্য তাঁর নামে সুপারিশ করেছি। তবে পদোন্নতি হতেই হবে, তা-ও নয়।’

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে সংসদ সদস্য শাজাহান খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি। কথা বলা সম্ভব হয়নি মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গেও।

এই প্রথম নামটি শুনলাম। দিনাজপুরের কোনো কর্মকর্তা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরত, এই প্রথম জানতে পেরেছি।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

‘চিঠি নকল’

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আধা সরকারি পত্র দিয়েছেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মইনুল হক আনসারীকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। তিনি পত্র দেন গত ৫ জুন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠিটি পৌঁছায় ১৭ জুলাই।

পত্রে বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব মইনুল হক আনসারী দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি সৎ, দক্ষ, প্রত্যুৎপন্নমতির এবং পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের একজন কর্মকর্তা। পত্রে আরও লেখা হয়, মইনুল হকের ব্যাচের অনেকে ইতিমধ্যে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কাউকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য আধা সরকারি পত্র দেননি। তিনি মইনুল হক আনসারীকে চেনেন না বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম নামটি শুনলাম। দিনাজপুরের কোনো কর্মকর্তা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরত, এই প্রথম জানতে পেরেছি।’ আধা সরকারি পত্রটি নকল বলে দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী।

মইনুল হক আনসারীর স্থায়ী ঠিকানা দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার জোয়ার গ্রামে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাড়িও দিনাজপুরে। আধা সরকারি পত্রের বিষয়ে মইনুল হক আনসারী বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না।

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী তার পক্ষে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোনো অনুরোধ বা প্রস্তাব নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কোনো বেসরকারি ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে পারবেন না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যে কর্মকর্তার পক্ষ হয়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা পত্র দেন, সেই কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ, তিনিই পত্র পাঠানোর জন্য তদবির করেন। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের এভাবে আধা সরকারি পত্র দিতে নিষেধ করা উচিত। এতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।