ঝুঁকিতে সেতু, দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা জানান, রেলওয়ের অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ করে সওজ। প্রতিদিন যানবাহন চলাচল করে কমপক্ষে ৭৩ হাজার।

চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট সেতুর এমন বেহাল দশা। সম্প্রতি তোলা

চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট সেতুটি উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ৫০ বছর আগে টাইগারপাস থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের ওপর নির্মিত এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন যানবাহন চলে কমপক্ষে ৭৩ হাজার।

গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু নির্মাণের পর বড় কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুটি। এখন ধসের আশঙ্কা থাকলেও সংস্কারের দায়িত্ব নিতে রাজি নয় কোনো সরকারি সংস্থা।

পরিবহনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা সেতুটি ধসে পড়লে চট্টগ্রাম নগরের যান চলাচলব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কেননা, চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে পৌনে এক কিলোমিটার দূরে রেললাইনের ওপর সেতুটি অবস্থিত। সেতুর নিচ দিয়ে ছয়টি রেললাইন রয়েছে। ট্রেন চলাচলের কোনো বিকল্প রেললাইন নেই। যান চলাচলে বিকল্প কিছু সড়ক থাকলেও তা চাপ নিতে পারবে না।

গত ১৯ জুন সরেজমিন দেখা যায়, সেতুটির একাধিক পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটির পাশের অংশে বিভিন্ন ধরনের গাছ জন্মেছে। সে গাছের শিকড় পিলার ঢেকে দিয়েছে।

পিলার থেকে সিমেন্ট-বালুর আস্তর খসে পড়েছে। সেতুর টাইগারপাস অংশে ফুটপাতের লোহার বেষ্টনী ভেঙে গেছে। এই সেতুর পাশ দিয়ে চলছে এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে কাভার্ড ভ্যান, লরি, ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী ও হালকা যানবাহন চলাচল করছে।

চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য করা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে নগরের টাইগারপাস থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার গাড়ি চলাচল করত। আর ২০২৩ সালে চলাচল করছে গড়ে ৭৩ হাজার।

সংস্কারের দায় নিচ্ছে না কেউ

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া সেতুটির বড় ধরনের সংস্কার যখন জরুরি হয়ে পড়েছে, তখন সেতুর দায়িত্ব নিচ্ছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়ে বড় ধরনের সংস্কারের বিষয়ে নীরব রয়েছে তিন সংস্থা।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা জানান, আগে নগরের টাইগারপাস থেকে দেওয়ানহাটে যাওয়ার জন্য সড়ক ছিল। কিন্তু ট্রেন চলাচলের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ১৯৭৩-৭৪ সালে রেলের অর্থায়নে ১ হাজার ২২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ৬০ ফুট প্রশস্ততার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। রেলওয়ের সক্ষমতা না থাকায় তাদের অনুরোধে সওজ সেতুটি নির্মাণ করেছিল।

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরের অন্যান্য সড়ক ও সেতু-কালভার্ট যে রকম রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিল, তেমনি দেওয়ানহাট সেতুতেও কাজ করা হয়। সেতুটির এখন যে অবস্থা, তাতে বড় ধরনের সংস্কার জরুরি। কিন্তু সেতুটি বুঝে না পাওয়ায় তা সংস্কার করা সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব না।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞার কাছে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখা কার্যালয়ে খোঁজ নেন। এরপর তিনি জানান, এ সেতু সওজ বিভাগ নির্মাণ করেছিল। এতে তাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।

সওজের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, সওজ দেওয়ানহাট সেতু নির্মাণ করেছে এ রকম কোনো নথিপত্র তাঁদের কাছে নেই।