ফেসবুকে আলোচনা করে কাজ শুরু করে দিই

চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের হালদা নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামের নাম মোকামীপাড়া। গত সোমবার পানির তোড়ে গ্রামের প্রধান সড়কসহ বাড়িঘরে যাওয়ার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বেচ্ছাশ্রমে চলাচলের অনুপযোগী সড়কগুলো মেরামত করেন একদল তরুণ। সংগঠকদের একজন এস এম কায়সার হামিদ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এস এম ইউসুফ উদ্দিন। 

এস এম কায়সার হামিদ
প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনারা কতটুকু রাস্তা সংস্কার করেছেন? 

কায়সার হামিদ: এক কিলোমিটারের মতো রাস্তার বিভিন্ন জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমরা তা মেরামত করেছি। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: নিজেরাই উদ্যোগী হলেন কেন? 

কায়সার হামিদ: সরকার কবে মেরামত করবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ত। এটি গ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: অপেক্ষা করা যেত কি? 

কায়সার হামিদ: সরকারের অপেক্ষায় বসে থাকা মানে হলো পেটপুরে খাওয়ার জন্য মাসের পর মাস একেবারে কিছু না খেয়ে থাকা। তাই আমরা কয়েকজন সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নিই। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সড়কটি আগেও আপনারা মেরামত করেছেন বলে শুনেছি। 

কায়সার হামিদ: গত ৫ বছরে অন্তত ১৫ বার সড়কটি আমাদের মেরামত করতে হয়েছে। প্রতিবার বর্ষায় অথবা সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি তলিয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায়।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনারা কী ধরনের মেরামতের কাজ করেছেন? 

কায়সার হামিদ: সড়কটি ইটের। যেসব জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে বালু দিয়ে উঁচু করে ইট বিছিয়ে দিয়েছি। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: রাস্তাটির তো স্থায়ী মেরামত দরকার। 

কায়সার হামিদ: হ্যাঁ, সমাধান স্থায়ী হতে হবে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সড়ক মেরামতের জন্য টাকা কোথায় পেলেন? 

কায়সার হামিদ: এলাকার অনেকেই সাহায্য করেছেন। স্থানীয় এক ব্যক্তি বালুর ব্যবস্থা করেছেন। ইট কেনা হয়েছে প্রবাসী ভাইদের আর্থিক সহযোগিতায়। প্রতিবারই প্রবাসী ভাইয়েরা সহায়তা করেন। আর মেরামতের কাজে তরুণেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কত টাকা উঠেছিল? 

কায়সার হামিদ: নগদ টাকা উঠেছিল ২০ হাজারের মতো। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: তরুণদের কীভাবে সংগঠিত করলেন? 

কায়সার হামিদ: ফেসবুকে ‘হালদাপাড়ের মোকামীপাড়া’ নামের একটি গ্রুপ রয়েছে। সড়ক সংস্কারের বিষয়ে ওই গ্রুপে আলোচনা হয়। দিনক্ষণ ঠিক করে সবাই একত্র হই। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সংস্কারের কাজ করা হয়। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কতজন তরুণ কাজটি করেছেন?  

কায়সার হামিদ: আমরা পাঁচ থেকে ছয়জন কাজ শুরু করি। পরে অনেকে যোগ দেন। ৫০ থেকে ৬০ জন হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কেউ কটু কথা বলেছেন? 

কায়সার হামিদ: না, বরং উৎসাহ দিয়েছেন। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কাজ শুরুর আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানাননি? 

কায়সার হামিদ: বিভিন্ন সময়ে সড়কটি নষ্ট হওয়ার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছিল। তখন বালু আর ইট বসানো হয়। কিন্তু বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে সেসব ইট-বালু সরে গিয়ে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। টেকসই কোনো সমাধান কোনোবারই হয়নি। এ ছাড়া আগেই বলেছি, সরকারের কাজে অনেক সময় লাগে। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাদের রাস্তা মেরামতের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ কিছু বলেছেন? 

কায়সার হামিদ: অনেকেই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। 

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার পেশা কী? 

কায়সার হামিদ: চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে এমবিএ (বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর) পাস করেছি। এখন সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা করছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে কী পদক্ষেপ আশা করেন? 

কায়সার হামিদ: মোকামীপাড়া হালদা নদীর তীরবর্তী গ্রাম। এই গ্রামে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। এ কারণেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় মূল সড়ক। হালদা নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। সড়কটি উঁচু করে পিচ ঢালাই করা গেলে ভোগান্তি থেকে গ্রামবাসী মুক্তি পাবেন।