কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় রাজধানীর বাড্ডা ও রামপুরা এলাকা। আজ বুধবার দুপুরে
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় রাজধানীর বাড্ডা ও রামপুরা এলাকা। আজ বুধবার দুপুরে

ঢাকায় সংঘর্ষে ৩ জন নিহত, আহত কয়েক শ

রাজধানীর উত্তরা ও বাড্ডায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উত্তরায় সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। আর বাড্ডায় নিহত হয়েছেন একজন। এই দুই জায়গায় আহত হয়েছেন কয়েক শ আন্দোলনকারী।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উত্তরায় নিহত দুজনই আন্দোলনকারী। আর বাড্ডায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ব্যক্তি পথচারী ছিলেন। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক বলে রামপুরার ফরাজী হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পাশের ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাতে যোগ দেন। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে।

কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে র‍্যাব-পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে উত্তরায়

এর মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুলাল মাতব্বর নামের ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক রুবেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে আহত প্রায় দুই শ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাঁদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

উত্তরায়ও সকাল থেকে পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে নিহত এক ছাত্রকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তাঁদের হাসপাতালে আনা হয়।

পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নিহত ওই ছাত্র নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরে পরিবারের সদস্যরা তাঁর লাশ নিয়ে গেছেন।

অধ্যক্ষ জানান, শতাধিক ছাত্র আহত অবস্থায় এই হাসপাতালে আসেন। তাঁদের অনেককেই চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন ছিলেন।

অধ্যক্ষ সাব্বির আহমেদ বলেন, আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এত বেশি যে হাসপাতালে স্থান দিতে তাদের সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ৪০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত হয়ে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

র‍্যাব-পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে আহত এক শিক্ষার্থী। আজ দুপুরে রাজধানীর উত্তরায়

চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন চোখে আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের বাংলাদেশ আই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র‍্যাবের সংঘর্ষ শুরু আজ বেলা ১১টার পর থেকে।

ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোর গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে মূল সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ ও র‍্যাব তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে সংঘর্ষ শুরু হয়।