অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত এ ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ আজ বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও সরকারি বাংলো পাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য উপদেষ্টারা। মন্ত্রিপাড়া হিসেবে পরিচিত মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও হেয়ার রোডে সব মিলিয়ে ২০ বাংলো তাঁদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, এর আগে যাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান ছাড়া তাঁরা সবাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতেই থেকেছেন। যেমন, ২০০১ সালে লতিফুর রহমান ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ যমুনায় ছিলেন। গত মার্চে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসে যমুনায় ওঠেন।
এ বিষয়ে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহীদুল ইসলাম ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল শাখা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা প্রধান উপদেষ্টার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে।
উপদেষ্টাদের জন্য ২০ সরকারি বাংলো বরাদ্দ
মন্ত্রিপাড়ার মোট ২০টি সরকারি বাংলো নতুন উপদেষ্টাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এসব বাংলোতে সদ্য বিদায়ী সরকারের মন্ত্রীরা থাকতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদও বিলুপ্ত করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীরা সবাই বাসভবন ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তাঁদের মালামাল এখনো বাংলোতে রয়ে গেছে।
সাবেক মন্ত্রীদের রেখে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিতে তাঁদের একান্ত সচিবদের (পিএস) নির্দেশ দিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। আগামী শনিবারের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে পিএসরা বাসভবন থেকে মন্ত্রীদের মালামাল সরিয়ে নিতে অস্বস্তি বোধ করছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা সাবেক মন্ত্রীদের গাড়িচালকদের পাঠাচ্ছেন। কিন্তু চালকদের কাছে মন্ত্রীদের বাসভবনের মালামাল বুঝিয়ে দিতে নারাজ আবাসন পরিদপ্তর। পিএসদের সশরীর এসে মালামাল বুঝে নিতে বলা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে নতুন উপদেষ্টাদের জন্য বাংলো সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হবে।
মিন্টো রোডে সদ্য সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান যেসব সরকারি বাংলোতে থাকতেন, সেগুলো নতুন উপদেষ্টাদের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
বেইলি রোডে থাকা সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সরকারি বাংলো নতুন উপদেষ্টাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
হেয়ার রোডে সরকারি বাংলোতে থাকতেন সদ্য সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এসব বাংলোও নতুন উপদেষ্টাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ইস্কাটন গার্ডেনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ২০ নম্বর পার্ক রোডে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, গুলশানে অবস্থিত সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যেসব সরকারি বাড়িতে থাকতেন, সেগুলোও উপদেষ্টাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কে কোন বাসায় উঠবেন, তা পরে ঠিক হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য বাসভবন প্রস্তুত করতে আজ সকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। চিঠি পাওয়ার পরই কাজ শুরু করে আবাসন পরিদপ্তর। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হচ্ছেন ১৭ জন। বাকি তিনটি বাংলো প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহীদুল ইসলাম ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিদের রেখে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিতে শনিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হবে। এতে বেশি সময় লাগবে না। যত দ্রুত সম্ভব, কাজ শেষ হবে। কোন উপদেষ্টাকে কোন বাংলো বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা পরে নির্ধারণ করা হবে।
সংশোধনী
বিচারপতি হাবিবুর রহমান ১৯৯৬ সালে যমুনায় ছিলেন না। ভুল তথ্যটি সংশোধন করা হলো