ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করার সময় এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁয়ে
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করার সময় এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁয়ে

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ: চার মামলায় ২৭৩৩ আসামি, গ্রেপ্তার ৪২

ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল থানায় পৃথক চারটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ২ হাজার ৭৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগ গত দুই দিনে তাঁদের মধ্যে ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রোববার মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকেরা। বিক্ষোভকারীরা কালশী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দেন এবং যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় পুলিশের এক সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন।

আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশার ২০ থেকে ২৫ চালক মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের কারণে কিছু সময়ের জন্য ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে মিরপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলসহ ঢিল ছুড়তে শুরু করেন। এ সময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের এক ক্যামেরাপারসন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ব্যাটারিচালিত পাঁচ রিকশাচালককে ধরে নেয় পুলিশ।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাশুক মিয়া আজ প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগে গতকাল রাতে মিরপুর ও কাফরুলে একটি করে এবং পল্লবী থানায় দুটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার ৪২ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশের মিরপুর থানায় করা মামলায় বলা হয়, বিক্ষোভরত অনেক অটোরিকশাচালক (১২ জনের নাম উল্লেখসহ) বেআইনিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের সরকারি কাজে বাধা, আক্রমণাত্মক বল প্রয়োগ করে ক্ষতিসাধন করেছেন। তাঁরা বিআরটিসি পরিবহনের দুটি দ্বিতল বাসসহ অন্যান্য বাস ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া তাঁরা প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাও ভাঙচুর করেন।

পল্লবী থানায় করা দুই মামলায় ২২ জন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৮০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা মিরপুর–১২ নম্বর সেকশনের ই–ব্লকে ট্রাফিক বক্সের মধ্যে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেন। এতে ট্রাফিক বক্সটি আগুনে পুড়ে যায়। এর আগে পুলিশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করলে বিক্ষুব্ধ চালকেরা পল্লবীর কালশী মোড়ে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও শটগানের ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়।

কাফরুল থানায় করা মামলায় বলা হয়, গতকাল সকালে ৮০০ থেকে ৯০০ রিকশাচালক ও মালিকেরা মিরপুর-১০ নম্বরে শাহ আলী প্লাজার সামনে সড়ক অবরোধ করে বিআরটিসি বাসসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস, গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁরা লাঠি ও রড দিয়ে পুলিশকে পেটান।