সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। বিকেলে জমল কুয়াশাও। শীতের ছোঁয়া লাগা মধ্য হেমন্তের হাওয়া বইছিল একটু করে। তার সঙ্গে মিশে গেল নবান্ন উৎসবের সূচনায় সমবেত যন্ত্রসংগীতের সুরমূর্ছনা। এর পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সংগীত, আবৃত্তি, নৃত্যে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল আয়োজন।
নাগরিক পরিসরে দেশের ঐতিহ্যবাহী ঋতুভিত্তিক নবান্ন উৎসব এবার ২৫তম বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় ‘জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ’–এর আয়োজনে দুই দিনের এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেন, ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাতীয় ভিত্তিতে সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একই দিনে নবান্ন উৎসব আয়োজনের বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেবেন।
সভাপতির বক্তব্যে উদ্যাপন পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান বলেন, শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরতেই তাঁরা এই উৎসব আয়োজন করে আসছেন। এই উৎসবগুলো মানুষে মানুষে মানবিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্যাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান। সঞ্চালনা করেন সহসভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।
এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা প্রয়াত সংগীতশিল্পী ও কবি বুলবুল মহলানবীশের স্মৃতির প্রতি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বুলবুল মহলানবীশের স্বামী সরিৎ কুমার লালা। উদ্বোধনী আলোচনা পর্বের পরে দর্শকদের মধ্যে খই, মোওয়া, মুড়কি, বাতাসা, খাজা, গজা বিতরণ করা হয়।
‘আবার জমবে মেলা’ গানটি ‘তারার মেলা’র শিশুদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। নবান্ন বন্দনা করে কবিতা আবৃত্তি করেন নিমাই মণ্ডল। লায়লা হাসানের পরিকল্পনায় ‘ও ধান ভানি রে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন দীপা খন্দকার, নিলুফার ওয়াহিদসহ জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা। ফরিদা পারভীন গেয়ে শোনান লালন সাঁইয়ের গান ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’। তাঁর সঙ্গে বাঁশি বাজিয়েছেন গাজী আবদুল হাকিম। নবনীতা জাহিদ চৌধুরী গেয়ে শোনান নজরুলসংগীত ‘হেমন্তিকা এসো’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘ধান কাটি, কাটি ধান’। শিশুদের সংগঠন নন্দন কুঁড়ির শিশুরা গেয়েছে ‘ধন্য ধন্য বলি তারে।’ অনুষ্ঠান এভাবেই এগিয়েছে, গানের সুরে, নাচের ছন্দে।
‘এসো মিলি সবে’ নবান্নের উৎসবে স্লোগান নিয়ে দুই দিনের এই উৎসবের প্রথম দিনের আয়োজনে আরও ছিল দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের একক গান, আবৃত্তি, দলীয় সংগীত, দলীয় নৃত্য ও শিশুদের পরিবেশনা।
আগামীকাল শুক্রবার বকুলতালায় দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল চারটায়। থাকবে একক, দলীয় ও শিশুদের পরিবেশনা।