মাদক কারবারের জেরে দেশ থেকে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সম্পূরক ওই আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস।
‘মাদক ব্যবসার কারণে বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামে ১১ জুন প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এই প্রতিবেদনসহ এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়েছে।
আবেদনে টাকা পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সম্পূরক আবেদনে রুল চাওয়ার পাশাপাশি দেশের শীর্ষ মাদক চোরাকারবারিদের নাম ও ঠিকানা দুই মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাচারের মাধ্যমে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে গোপনে জমা রাখা বিপুল অর্থ উদ্ধারে অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সুবীর নন্দী দাসসহ সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী একটি রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
ওই রিট সূত্রে সম্পূরক আবেদনটি করা হয় বলে জানান আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক কেনাবেচার কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। এভাবে বিদেশে টাকা পাচারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। আর এশিয়ার দেশগুলো বিবেচনায় নিলে মাদকের মাধ্যমে অর্থ পাচারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
অবশ্য পাচার করা এ টাকার হিসাব অনুমানভিত্তিক। এটি করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড)। মাদক ও অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনওডিসির সহায়তায় এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অনুমানভিত্তিক এ হিসাব করা হয়েছে।
আঙ্কটাডের ওয়েবসাইটে অবৈধ অর্থপ্রবাহসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। তাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নয়টি দেশের মাদকসংশ্লিষ্ট অবৈধ অর্থপ্রবাহের অনুমানভিত্তিক হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, মালদ্বীপ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, নেপাল ও পেরু।