চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) উদ্বোধন করা হয়েছে ‘নাসা-স্টেমএক্স-চুয়েট অ্যাস্ট্রোবি ভার্চ্যুয়াল ল্যাব’। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে এই ল্যাবের উদ্বোধন করা হয়। চুয়েট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা এই ল্যাবে বসেই প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে একটি ফ্রি ফ্লায়িং রোবট (অ্যাস্ট্রোবি) নিয়ন্ত্রণ করে মহাকাশ স্টেশনে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারবেন। পাশাপাশি তাঁদের কাজ মহাকাশ স্টেশনে প্রয়োগের সুযোগও পাবেন।
ল্যাবের উদ্বোধন করেন চুয়েটের উপাচার্য মাহমুদ আবদুল মতিন ভূঁইয়া এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) মহাকাশবিজ্ঞানী ও মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টেমএক্স-৩৬৫–এর প্রতিষ্ঠাতা মিজানুল হক চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সদস্য ড. ইমতিয়াজ কামাল এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সজল চন্দ্র বণিক।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়েট ও স্টেমএক্স-৩৬৫–এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে স্টেমএক্স-৩৬৫ চুয়েট শিক্ষার্থীদের মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে সংযুক্ত করতে সব ধরনের সহায়তা দেবে।
এমআইটির মহাকাশবিজ্ঞানী মিজানুল হক চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত স্টেমএক্স–৩৬৫ অলাভজনক একটি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যা জাপানের জ্যাক্সার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশি তরুণদের জন্য বিনা পয়সায় মহাকাশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এমআইটির জিরো রোবটিকস ল্যাবের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেধাবী তরুণেরা প্রোগ্রামিং শিখছেন, মহাকাশ নিয়ে জানছেন, রোবট বানাচ্ছেন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক কিবো রোবটিকস প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ২০২১ সালে দ্বিতীয়, ২০২৩ সালে পঞ্চম এবং ২০২৪ সালে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
মিজানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে মহাকাশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের দেশের তরুণেরা হাতে-কলমে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের কোনো সুযোগ পেতেন না। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জ্যাক্সা) তাদের সদস্যভুক্ত এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর তরুণদের এ বিষয়ে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনে সুযোগ দেয়।
মিজানুল হক বলেন, ‘জ্যাক্সার সদস্য হতে হলে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, যার জন্য বাংলাদেশের তরুণেরা মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে শেখা ও কাজ করার সুযোগ পেতেন না। দেশের তরুণদের জন্য মহাকাশে কাজ করার সুযোগ করে দিতে প্রতিষ্ঠা করি স্টেমএক্স-৩৬৫। প্রতিষ্ঠানটি জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (জ্যাক্সা) সঙ্গে চুক্তি করে বিনা মূল্যে বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মহাকাশ স্টেশনের বিভিন্ন গবেষণায় যুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।’
মিজানুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘চুয়েটের শিক্ষার্থীদের মহাকাশ গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং মহাকাশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাঁদের সুযোগ করে দিতে একটি ভার্চ্যুয়াল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে তাঁদের মহাকাশ স্টেশনে কাজ করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। এর জন্য শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে দুই প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করে যাবে।’
চুয়েটের উপাচার্য মাহমুদ আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মহাকাশের বিভিন্ন রহস্য অনুসন্ধানে কাজ করতে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক আগ্রহ। তাঁদের জন্য মহাকাশ গবেষণায় কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিতে আমরা স্টেমএক্স-৩৬৫–এর সঙ্গে মিলে যৌথভাবে একটি ল্যাব স্থাপন করেছি। এই ল্যাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা মহাকাশ স্টেশনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সিমুলেশন করবেন। সেগুলো থেকে বাছাই করা সমাধানগুলো স্টেমএক্স-৩৬৫ এর মাধ্যমে মহাকাশ স্টেশনে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে সমাধান করা শিক্ষার্থীরা নাসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মহাকাশ গবেষণায় কাজ করার সুযোগ পাবেন।’