ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা জরুরি

চলতি বছরের মার্চে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের বৈশ্বিক বাজারবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী এবং মার্কিন ও বৈদেশিক বাণিজ্যসেবার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অরুণ ভেঙ্কটরমন। তিনি সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে বাণিজ্যসেবা দপ্তর উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন। সফরের ফাঁকে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন।

অরুণ ভেঙ্কটরমন
প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার এবারের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য কী?

অরুণ ভেঙ্কটরমন: ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে বাণিজ্যসেবা দপ্তরের উদ্বোধনের জন্য এবার ঢাকায় এলাম। এখানে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিনিধি হিসেবে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, তাতে খুব শিগগির দেশটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এই রূপান্তরের মাধ্যমে অনেক সুযোগ মার্কিন ব্যবসায়ীদের সামনে আসবে। আবার বাংলাদেশ সরকারের সামনে এই উত্তরণ অনেক চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসবে। এমন এক পরিস্থিতিতে সমাধানের প্রক্রিয়ায় মার্কিন ব্যবসায়ীদের অবদান রাখার সুযোগ আছে। মার্কিন ব্যবসায়ীদের সেই ভূমিকাটা রাখা উচিত। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে মার্কিন দূতাবাসে বাণিজ্যসেবা দপ্তর চালু করা হয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হলে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে কি? এ নিয়ে ওয়াশিংটন কী ভাবছে?

অরুণ ভেঙ্কটারমন: আমরাসহ অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারেরা অনেক বিষয় চিহ্নিত করে তা সুরাহার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করছি। বিশেষ করে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে। এসব লক্ষ্য পূরণে অন্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছি। ভবিষ্যতেও এই কাজ অব্যাহত থাকবে। আমাদের মধ্যে যেহেতু আলোচনা অব্যাহত থাকবে, তাই আমরা চাইব, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদনকারী হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকা অটুট থাকবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কী ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা বলছেন?

অরুণ ভেঙ্কটারমন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাকশিল্পের জোরালো ভূমিকার আমরা প্রশংসা করি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রাথমিকভাবে রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। কাজেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশ। কিন্তু তারা মূলত জ্বালানি খাতে এখন পর্যন্ত বিনিয়োগ করে আসছে। জ্বালানির বাইরে আর কোন কোন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছেন?

অরুণ ভেঙ্কটারমন: অবশ্যই। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই বিনিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমি এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে শুনেছি, তারা যথেষ্ট উজ্জীবিত। চিরাচরিত জ্বালানির বাইরে গিয়ে তারা নতুন ধরনের জ্বালানি, নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানির দিকে যেতে আগ্রহী। পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতেই তাদের বেশি মনোযোগ। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো দেখছে, উন্নয়নের ধাপগুলো পেরোনোর নানা পর্যায়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে মধ্যবিত্তে পরিণত হচ্ছে। এখানে প্রতিটি খাতেরই বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা এখানে বাড়ছে। ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসা চূড়ান্ত অর্থেই অনেক বেশি উৎপাদনশীল হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এসব ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতাকে ধারণ করে কীভাবে ব্যবসা এগিয়ে নেওয়া যায়, তা সামনের দিনগুলোতে আলোচনায় আসবে। বিনিয়োগের আরেকটি ক্ষেত্র অবকাঠামো। নদী খনন, সেতু নির্মাণ, ঢাকা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণসহ নানা ক্ষেত্রেই মার্কিন ব্যবসায়ীরা অবদান রাখতে পারেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা সেই পর্বটা পার করে এসেছি, যখন বলা হতো, বাংলাদেশে আমরা এক বা দুটি ক্ষেত্রে কাজ করতে পারি, যেখানে উভয় পক্ষ লাভবান হবে। এখন কিন্তু এখানে অনেক ক্ষেত্রে আছে, যেখানে বিনিয়োগে করে লাভ উঠে আসার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ কেমন? কেন মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে এ দেশে আসছে না?

অরুণ ভেঙ্কটারমন: বাংলাদেশে ব্যবসা চালুর আগে এখানকার ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের পরিবেশকে যেভাবে দেখেন, মার্কিন ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গি তার চেয়ে আলাদা কিছু নয়। এখানে চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে ঝুঁকি কমানোর সামর্থ্য। এটি একটি স্থিতিশীল, সংরক্ষণমূলক আইনিপ্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি আইনের শাসন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে ঠিক হয়। ব্যবসায়ীরা এমন পদ্ধতি চান, যাতে তাঁরা ব্যবসার ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিতে পারেন। এখানে আন্তর্জাতিক ভালো দৃষ্টান্তগুলোর অনুসরণে একটি ডিজিটাল নীতিমালা তাঁরা চান। পাশাপাশি তাঁরা এ দেশের দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে চান। শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গেলে রানা প্লাজা ধসের পর যে উন্নতি এখানে হয়েছে, সেটা আমরাও লক্ষ করেছি। শ্রমমানের উন্নয়নে আমরা ইইউ ও আইএলওর মতো অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ইতিহাস গর্ব করার মতো। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে খোলামেলা ও উদার মনোভাব নিয়ে অংশীদারত্বের মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমাদের কথা বলাটা জরুরি। আলোচনার এই প্রক্রিয়ায় আমরা নিজেদের ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের যুক্ত রাখতে পারি। আমাদের সামগ্রিক এই আলোচনার লক্ষ্য—এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে প্রক্রিয়াগুলো আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তার আরও উন্নত করা। এই উন্নতির মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য এ দেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা।