এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি দুর্গাপূজা হয়েছিল। সে হিসাবে এবার ৯৪৭টি দুর্গাপূজা কম হচ্ছে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এসব তথ্য জানিয়েছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠন দুটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণে দুর্গত এলাকার কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেননি।
সংগঠন দুটির হিসাবে, ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়েছিল। সে হিসেবে এবার ঢাকা মহানগরে ৪টি পূজা বেড়েছে।
পূজার সূচি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আজ শারদীয় দুর্গাপূজার বোধন। আগামীকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী। ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী। ১২ অক্টোবর মহানবমী। তবে পঞ্জিকামতে ১২ অক্টোবর মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমী উদ্যাপন করা হবে। সেদিন বিকেলে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হবে।
এর আগে পিতৃপক্ষের অবসানে গত ২ অক্টোবর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ সূচিত হয়েছে, যা মাতৃপক্ষ নামেও অভিহিত।
জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, তাঁরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছেন, যে সমাজে সব ধর্মের ধর্মীয়, সর্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি ও পুলিশি পাহারা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে।
লিখিত বক্তব্যে দুর্গাপ্রতিমা ও মন্দিরে হামলার ঘটনার চিত্রও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, তবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তাঁরা পূজার মধ্যে এমন হামলা দেখতে চান না।
এক প্রশ্নের জবাবে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, এবার ১৮টি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে। মামলায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি একটি দ্রুত সাড়া (কুইক রেসপন্স), যা তাঁদের সব সময়ের দাবি। এর আগে তাঁরা এটা কোনো সময় পাননি, এবার পাচ্ছেন। এটি একটি ইতিবাচক লক্ষণ।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি সারা দেশের পূজা মণ্ডপগুলোর জন্য ২২ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে—১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে। উচ্চ শব্দের মাইক, পিএসেট ও আতশবাজি–পটকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভক্তিমূলক বা ধর্মীয়সংগীত ব্যতীত অন্য কোনো গান বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে—এরূপ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। ইভটিজিং, ছিনতাই ইত্যাদিতে কেউ জড়িত হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানাতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করতে হবে প্রভৃতি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর।