জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন: অনলাইনে আবেদন আবার চালু

অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের আবেদনপ্রক্রিয়া সর্বসাধারণের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। এক মাস বন্ধ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার আবার তা খুলে দেওয়া হয়। এদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় এখন থেকে আবেদন ফরম জমা নেওয়া, সংশোধন ও সনদ দেবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়।

আগে নিবন্ধনের কাজের দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর। এখন কাজের এই দায়িত্ব পরিবর্তনের কারণে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গত বুধবার থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। আর রাজস্ব আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই মাস ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় নিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত ১ আগস্ট জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনে অনলাইনে নিজে আবেদন করার সুযোগ বন্ধ করে নোটিশ জারি করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। নোটিশে অনলাইনে আবেদনের সুযোগ বন্ধের জন্য নিবন্ধনের সার্ভার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। এ সময় নিবন্ধনের আবেদনকারীকে তাঁর নিকটস্থ নিবন্ধকের কার্যালয়ে যোগাযোগের মাধ্যমে আবেদন করার অনুরোধ করা হয়।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ ৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে একটি সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। কোন ওয়েবসাইট, তা নিরাপত্তার জন্য তারা ওই সময় প্রকাশ করেনি। পরবর্তীকালে তারা আরেক প্রতিবেদনে জানায়, সংস্থাটি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়।

অনলাইনে আবেদন বন্ধ থাকার সময় উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে গিয়ে লোকজন আবেদন করতে পারতেন। তবে অনলাইনে আবেদনের সুযোগ আবার চালু হওয়ায় বুধবার থেকে আঞ্চলিক কার্যালয়ে নিবন্ধনের কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএনসিসির অঞ্চল-৫–এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, যে অনুমোদিত ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে তাঁরা জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ করতেন, তা বন্ধ করে দিয়েছে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।

জানা গেছে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়কে অনুমোদিত ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া শুরু করেছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। রোববার দুপুরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের জনবলকে আবেদনের কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেবে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।

কবে নাগাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে আবেদন ফরম জমা ও সংশোধনের কাজ করা যাবে, তা জানতে চাইলে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, রোববার প্রশিক্ষণ শেষে এ দিন থেকেই ডিএনসিসিতে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের আবেদন নেওয়ার কাজ চালু হবে।
রাশেদুল হাসান বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে দিনে ১০০টির বেশি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কার্যালয়ে দিনে ৩০টির বেশি আবেদন করা যাবে না। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় এবং ইউপি কার্যালয়ে নিবন্ধের কাজ আগে থেকেই চালু রয়েছে।

এদিকে ডিএসসিসি এলাকায় দুই মাস ধরে জন্মনিবন্ধনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই প্রক্রিয়া সেখানেও চালু হবে কি না জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, তারা এখনো চালু করতে চায়নি। কবে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তাঁর জানা নেই। প্রসঙ্গত, ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজে করপোরেশনের ব্যয়ের পুরো টাকা সরকার পরিশোধ না করা পর্যন্ত নিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত এপ্রিলে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু হয়। পরে পর্যায়ক্রমে ই–পেমেন্ট সারা দেশে চালু করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। এই ব্যবস্থা চালুর পর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিবন্ধনের ফি সরাসরি চলে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখে ডিএসসিসি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজে তাদের বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। নিবন্ধন ফি তাদের তহবিলে জমা না হলে বছরে এই পরিমাণ টাকা করপোরেশনকে দেবে সরকার।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম তাঁর একান্ত সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন-৩ অধিশাখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীকে এ সমস্যা সমাধানে দায়িত্ব দিয়েছেন। শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নূরে আলম সিদ্দিকী কল ধরেননি।

তবে গত ২৫ জুলাই নূরে আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে যদি অন্য কোনো কোডে টাকা আনা যায় (ডিএসসিসির ব্যয়ের টাকা পরিশোধের জন্য), তাহলে সমস্যার আপাতত আপৎকালীন সমাধান হবে।

বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য এই ব্যয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোড তৈরি করতে হবে। তারা যে ব্যয় করে, তার তুলনায় সরকারের বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তাদের ব্যয়ের টাকাটা তারা চাইছে। তাদের এই সমস্যাটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’