গত ৩০ সেপ্টেম্বর একজন গ্রাহক ইন্টারনেট সেবাদাতা একটি মুঠোফোন অপারেটরের ৩০ দিন মেয়াদি ৪০০ মিনিট ও ২৫ জিবির একটি প্যাকেজ কেনেন ৫৭৩ টাকায়। মেয়াদ শেষে সেই একই প্যাকেজ কিনতে তাঁকে ব্যয় করতে হয় ৬৫০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ৭৭ টাকা বেশি গুনতে হয় সেই গ্রাহককে।
মুঠোফোন অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট প্যাকেজ কমিয়ে সম্প্রতি নতুন একটি নির্দেশিকা দেয় সরকার। গত ১৫ অক্টোবর এ নির্দেশিকা কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকে ইন্টারনেটের বাড়তি দাম নিচ্ছে অপারেটরগুলো। তবে বাড়তি এ দামে ক্ষুব্ধ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তাঁর প্রশ্ন, গ্রাহকদের সুবিধার কথা ভেবে প্যাকেজ কমানো হয়েছে। বাড়তি দাম নেওয়া হবে কেন?
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রণীত নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী মুঠোফোন অপারেটরগুলো ৭ ও ৩০ দিন মেয়াদি প্যাকেজ দিতে পারবে। এ ছাড়া থাকবে সীমাহীন মেয়াদি (আনলিমিটেড) প্যাকেজ। মোট ৪০টি প্যাকেজ দিতে পারবে অপারেটরগুলো। এত দিন ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও সীমাহীন মেয়াদি প্যাকেজ ছিল। অপারেটরেরা মোট ৯৫টি প্যাকেজ দিতে পারত।
তবে নতুন নির্দেশিকার কিছু বিষয় বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিল অপারেটরগুলো। দাম বাড়তে পারে, সে কথা বলেছিল। শেষ পর্যন্ত তা–ই হলো। এক মাস না যেতেই এ নিয়ে আপত্তি জানালেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অপারেটরগুলোকে বাড়তি দাম কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে দেশের চারটি অপারেটরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিটিআরসির কর্মকর্তারা। সেখানেই এই নির্দেশ দেন মন্ত্রী। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের বাড়তি দাম নিয়ে ক্ষোভও জানান তিনি।
গ্রাহকদের ক্ষতি নয়, সুবিধার জন্যই নতুন নির্দেশিকা। দাম বাড়ানো এর উদ্দেশ্য ছিল না। আজকের মিটিংয়ে তাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে।মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী
বৈঠকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে পুরোনো নির্দেশিকার দামে ফেরত যাওয়ার জন্য অপারেটরদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এই নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেবেন বলে অপারেটরগুলোকে সতর্কও করেন। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইন্টারনেটের দাম বাড়ুক, সেটা তিনি চান না। আজকের বৈঠকে অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত না থাকার জন্যও ক্ষোভ জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রীর সঙ্গে আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়া চার অপারেটরের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেই নতুন নির্দেশিকা কার্যকর করা হয়েছে। হুট করে এখন আবার তা পরিবর্তন করা চ্যালেঞ্জিং।
বৈঠক প্রসঙ্গে মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকদের ক্ষতি নয়, সুবিধার জন্যই নতুন নির্দেশিকা। দাম বাড়ানো এর উদ্দেশ্য ছিল না। আজকের মিটিংয়ে তাদের মেসেজ দেওয়া হয়েছে।’
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলেছিল, ৩ দিনের প্যাকেজ না থাকায় গ্রাহকদের এখন বাড়তি দামে ৭ দিনের প্যাকেজ কিনতে হবে। আর্থিক কারণে যাঁরা কম মেয়াদি প্যাকেজ ব্যবহার করেন, তাঁদের ওপর এর প্রভাব পড়বে বেশি।
অপারেটরগুলো অবশ্য সতর্ক করেছিল, নতুন নির্দেশিকা কার্যকর হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়তে পারে। এ নিয়ে জানতে চাইল মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের তো দাম বাড়াতে বলা হয়নি। প্যাকেজ কমাতে বলা হয়েছে। তারা একই স্পিড গ্রাহকদের তিনটি মেয়াদে দেবে। এতে করে দাম বাড়বে কেন?’
মুঠোফোন ইন্টারনেট প্যাকেজের বাড়তি দাম ও গ্রাহকদের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে গত সপ্তাহে গ্রামীণফোনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র হোসেন সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাত্র কিছুদিন হয়েছে বিআরটিসির নির্দেশনা মেনে আমরা ৭ দিন এবং ৩০ দিন মেয়াদি ডেটা প্যাকেজ চালু করেছি। বর্তমানে এটা পর্যবেক্ষণ করছি। গ্রামীণফোন গ্রাহকদের সব সময় উন্নত সেবাদানের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই গ্রাহকদের সুবিধার্থে নতুন প্যাকেজ সহজ করা হয়েছে।’
নতুন নির্দেশিকা প্রসঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলেছিল, ৩ দিনের প্যাকেজ না থাকায় গ্রাহকদের এখন বাড়তি দামে ৭ দিনের প্যাকেজ কিনতে হবে। আর্থিক কারণে যাঁরা কম মেয়াদি প্যাকেজ ব্যবহার করেন, তাঁদের ওপর এর প্রভাব পড়বে বেশি। সরকার ও অপারেটর উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক আর্থিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহকও কমতে পারে।
অপারেটরগুলোর দেওয়া হিসাবে, মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬৯ শতাংশের বেশি ৩ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করতেন। দেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১২ কোটি। উল্লেখ্য, কেউ সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই তাঁকে গ্রাহক ধরা হয়ে থাকে।