ছাত্রদল
ছাত্রদল

ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চলছে: ঢাবি ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদলকে নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটায় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ডাকসু নির্বাচন চায় না, ডাকসু নির্বাচন দেরিতে হোক—এ রকম বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও মনগড়া শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা নিতান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হীন একটি চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

ছাত্রদলের বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ–সমর্থিত সিন্ডিকেট সদস্যদের অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানানোর পর থেকে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ডাকসু নির্বাচন। সেটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নিজেদের প্রাণের দাবি হিসেবে বিবেচনা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বারবার ডাকসু সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে দাবি জানিয়ে এসেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমানে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সব অংশীদারের প্রস্তাব আহ্বান করেছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে ডাকসুর উপযুক্ত সংস্কার ও নিয়মিত নির্বাচন চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করছে ছাত্রদল। এরপরও ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচন চায় না, এমন অপপ্রচার চলছে।

ছাত্রদলের চার নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি ও সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রদল কর্তৃক ডাকসু–বিষয়ক আলোচনায় বাধা ও উপাচার্যকে হেনস্তার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ–সমাবেশ করেন একদল শিক্ষার্থী। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বক্তব্যের শুরুতেই ছাত্রদল কর্তৃক হেনস্তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, উপাচার্যকে অপমান করার মাধ্যমে ছাত্রদল পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কেই অপমান করেছে।

এদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সংগঠনের চারজন নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এ–সংক্রান্ত চারটি আলাদা বিজ্ঞপ্তি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়।

যাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ছাত্রদলের সূর্যসেন হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবিদুর রহমান, বিজয় একাত্তর হল শাখার দপ্তর সম্পাদক সাকিব বিশ্বাস, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার প্রচার সম্পাদক মনসুর আহমেদ রাফি ও বিজয় একাত্তর হল শাখার সহ–দপ্তর সম্পাদক সুলতান মো. সাদমান সিদ্দিক। নোটিশে ৪ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের লিখিত ব্যাখ্যা সশরীর উপস্থিত হয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের সূর্য সেন হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবিদুর রহমান উপাচার্যকে হেনস্তার অভিযোগকে জঘন্য মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ওপেন চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের হাতে উপাচার্যের হেনস্তা হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘তবুও ছাত্রদলের যেসব পদস্থ নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের আমরা সাংগঠনিক স্বচ্ছতার স্বার্থে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট সভায় আওয়ামী লীগপন্থী সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আলাদা বিক্ষোভ করেন। পরে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সেখানে উপস্থিত হয়ে উভয় পক্ষের কথা শোনেন। তখন ছাত্রদল উপাচার্যকে হেনস্তা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবাদের ভাষা তো একটু উচ্চ স্বরেই হয়। আমরা সেটাতে অভ্যস্ত।’ তিনি বলেন, তাঁদের কাছে ঘটনাটিকে হেনস্তা বা অপমান, এমন কিছু মনে হয়নি। তবে বাইরে থেকে কেউ দেখলে হয়তো এমন মনে হতে পারে।

প্রক্টর আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানাচ্ছিলেন। দাবি জানাতে গিয়ে কেউ হয়তো একটু উচ্চ স্বরে কথা বলেছেন। তাঁদের অনেকগুলো দাবি যৌক্তিকও ছিল।