বাঙালি জাতির সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মানসিক বোঝাপড়া ছিল একই রকম। একজন সে অনুভব প্রকাশ করেছেন নিজের সৃষ্টিতে। অন্যজনের রাজনৈতিক দর্শনে উঠে এসেছে সেই বোঝাপড়া। তাই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে খুঁজে পাওয়া যায় নজরুলের বিখ্যাত ‘অগ্নিবীণা’ কবিতার সুর। ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ: বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিত রূপ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
আজ বুধবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠান। একক বক্তৃতা ও নজরুল পুরস্কার ২০২৩ প্রদানের সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমির প্রয়াত সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী এবং কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ সদ্য প্রয়াত কল্যাণী কাজীকে স্মরণ করা হয়।
নজরুল সাহিত্যের যেকোনো বিষয়ে গবেষণার জন্য দেওয়া হয় নজরুল পুরস্কার। নজরুলসংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য এ বছর পুরস্কার পেলেন শিল্পী শাহীন সামাদ।
সুর ও শব্দ অবিকৃত রেখে ১৯৬৪ সাল থেকে নজরুলসংগীত গাইছেন তিনি। তৈরি করেছেন অনেক নজরুলসংগীতশিল্পী। মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গনে ঘুরে ঘুরে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের উজ্জীবিত করেছেন এই গুণী শিল্পী। ১৯৬৬ সাল থেকে তিনি ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত।
সম্মাননা গ্রহণের পর শাহীন সামাদ বলেন, পুরস্কার পেলে দায়িত্ব বাড়ে। জীবনের বড় পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীকে শুদ্ধ স্বরলিপিতে গান শেখাতে পারা। শুদ্ধ স্বরলিপি সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য গানের শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি বলেন, নজরুল আর বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক অবিভাজ্য। বাঙালির ব্যক্তিস্বাধীনতার উচ্চারিত এক রূপ ‘অগ্নিবীণা’ কবিতা। সেই স্বাধীনতার আহ্বানই উঠে এসেছিল ৭ মার্চের ভাষণে। নজরুল আর বঙ্গবন্ধুর বয়সের ব্যবধান ছিল ২১ বছর। এই দুজন মহান ব্যক্তির কাছ থেকে জাতির সাম্য প্রতিষ্ঠার চেতনা পাওয়ার কথা উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। তাঁর বক্তব্যে স্থান পায় পরবর্তী প্রজন্মকে নজরুলের সৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত করার আহ্বান। নিত্যদিনের চর্চায় নজরুলের সাহিত্যকে স্থান দিলে এক বড় দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং কবিকে যথাযথ সম্মান জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সেলিনা হোসেন। রবীন্দ্রনাথ–প্রভাবিত সময়েও নজরুলের ভিন্ন ধারার সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেন তনি।
আয়োজনে মূল একক বক্তব্য দেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা প্রকাশের সময় নজরুলকে আঁধারের অগ্নিসেতু বাঁধার আশীর্বাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘অগ্নিবীণা’ খেলাচ্ছলে লেখা শুধু আগুন নয়। এর ১২টি কবিতা শুধু চমক নয়, একেকটি বিস্ময়ের নাম।
জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন আয়োজনে আবৃত্তি করেছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শাহাদাৎ হোসেন ও রুবিনা আজাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শাহেদ মমতাজ। নজরুলসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারি ও রাহাত আরা গীতি।