বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তা পাবেন না।
পবিত্র হজযাত্রার খরচ যৌক্তিকভাবে কমানোর বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার।
এক মাসের মধ্যে কোন কোন মন্ত্রণালয় কী কী কাজ করেছে তা জানানো হবে।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেবে সরকার।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ (অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা) বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অতীতে প্রায় সব সরকারই এই সুযোগ দিয়ে আসছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বৈঠকে ‘বৈষম্যমূলক নীতি’ বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় প্রণীত আইন বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সাংবাদিকদের কাছে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়গুলো কী কী কাজ করেছে, সে বিষয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সরকার পবিত্র হজযাত্রার খরচ যৌক্তিকভাবে কমানোর বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেবে সরকার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা ও শেয়ারসহ যেকোনো বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ স্থাবর সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না—এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। কালোটাকা সাদা করার এমন সুযোগ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা রয়েছে।
প্রায় সব সরকার (১৯৯১–৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকার ছাড়া) কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কালোটাকা সাদা করার যে বিধি ও রীতি আছে, সেটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এখান থেকে (কালোটাকা সাদা করার সুযোগ) সরকার যেটুকু টাকা আনতে পারে, সেটা খুব বেশি কিছু নয়; বরং মূল্যবোধ অনেক বেশি অবক্ষয় হয়। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধেও কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধের সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি আদেশের মাধ্যমে বলে দেওয়া হতে পারে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে যা যা দরকার, সেই কাজগুলোও শুরু হয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তার সুবিধা পাবেন না।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ জারি করা হয়েছিল। পরে ২০১৫ সালে এই আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারি করা হয়। কেবল একটি পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য আইনটি করা হয়েছিল, যা একটি সুস্পষ্ট বৈষম্য।
এর আগে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ছাড়ার পর ‘জাতির পিতার পরিবার–সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০১’ বাতিল করেছিল তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার।
গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স বা এসএসএফ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ -এর খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যগণ’ এবং কোনো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছিল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ আইনের আওতায় প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনের আওতায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যগণের’ নিরাপত্তা প্রদানসংক্রান্ত বিধানগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাই এ আইনের কিছু বিধান বিলোপসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে অনুমোদন করা হয়।
বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারণে খরচ বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রিজওয়ানা হাসান বলেন, পবিত্র হজযাত্রার খরচ যৌক্তিকভাবে কমানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বন্যার কারণে রপ্তানিমুখী যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের শ্রমিকদের স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত থাকে, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান।
সংস্কার প্রস্তাবের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়া চালু রাখা হবে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, দলগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব যা আসবে, সেগুলো গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর এক মাসের মধ্যে কোন কোন মন্ত্রণালয় কী কী কাজ করেছে, সরকার কী কাজ করেছে, সে বিষয়ে নোট প্রস্তুত করে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া হবে।
একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন পদে ফিরছেন, বিষয়টি কীভাবে দেখেন? জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, যেকোনো একটি সরকার চালাতে গেলে ভালো কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার হয়। আগের সময়ে যাঁরা ভালো পদে ছিলেন, তাঁদের কাউকে নেওয়া হবে না—এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে কাজ এগোবে কেমন করে? তিনি বলেন, ‘এই রেজিম, সেই রেজিম, আগের রেজিম, পরের রেজিম বললে আমাদের সঙ্গে অন্যদের তফাৎটা কী হলো?’ তবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সেটি জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।