সরকার জনগণের তথ্য–উপাত্ত সুরক্ষায় খসড়া আইন তৈরি করেছে। এই আইনের কিছু ধারা উদ্বেগ তৈরি করেছে।
প্রস্তাবিত খসড়া আইন নাগরিকদের উপাত্তে নজরদারির ঝুঁকি বাড়াবে।
কিছু ধারার কারণে ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা।
নির্বাহী বিভাগকে অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
কিছু ধারায় আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অব্যাহতি।
মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় একটি অংশ অনলাইনকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। দিন দিন এটি বাড়ছে। এতে মানুষের তথ্যের গোপনীয়তা ও উপাত্ত (ডেটা) সুরক্ষার গুরুত্বও বাড়ছে। বিশ্বের অনেক দেশ উপাত্ত সুরক্ষার আইন করেছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯৪টি দেশের মধ্যে ১৩৭টি দেশে উপাত্ত সুরক্ষা আইন আছে। বাংলাদেশে এখনো এ–সংক্রান্ত কোনো আইন বা বিধি নেই।
তবে সরকার ২০১৯ সালে উপাত্ত সুরক্ষায় একটি আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের মতামত নিতে প্রথম চলতি বছরের মার্চে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২’ নামে আইনের খসড়া ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে। এর মধ্যে খসড়ার দুটি সংশোধনী প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া আইন নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল।
আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির অধিকারে থাকা উপাত্তের সুরক্ষা দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ–সংক্রান্ত বিষয় নিয়ন্ত্রণে বিধান করা প্রয়োজন।
খসড়া প্রকাশের পর এর কিছু ধারা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী নেতারাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনেকে মতামত দেন, আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আইসিটি বিভাগ গত আগস্টে জানায়, এ নিয়ে ২১টি জায়গা থেকে মতামত এসেছে।
১৬ জুলাই পর্যন্ত সংশোধিত খসড়ার ওপর জাতিসংঘের বাংলাদেশ দপ্তর গত ১০ আগস্ট সরকারকে ১০টি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বিশ্ব সংস্থাটির অন্যান্য অঙ্গ সংস্থাও নিজেদের বিষয়গুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা (ইউডিএইচআর), নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর) এবং দেশের সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে এই আইন প্রণয়েনর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ। আইনে গোপনীয়তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, আইন পর্যালোচনা ও বিবেচনায় নিতে সরকারকে উৎসাহিত করেছে জাতিসংঘ।
খসড়া নিয়ে ব্যবসায়ী, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছে আইসিটি বিভাগ। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেছেন, আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকের আগে খসড়াটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে।
তবে জাতিসংঘ আইনটির কিছু ধারাকে মানবাধিকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যায়িত করে এগুলোর অপব্যবহারের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, আইনটি কার্যকর হলে নাগরিকের তথ্য-উপাত্তে নজরদারি বাড়বে। খসড়ায় নির্বাহী বিভাগকে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অথচ আইনটির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নাগরিকের তথ্যের সুরক্ষা—নিয়ন্ত্রণ নয়।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, প্রত্যেকের সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া হবে। আইনটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কী আইন বা বিধান আছে, তা দেখা হবে। কোন কোন জায়গায় মনোযোগী হতে হবে, তা–ও খতিয়ে দেখা হবে। সরকার চেষ্টা করছে নাগরিকবান্ধব একটি আধুনিক আইন করতে, যা নাগরিকের উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
তবে প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেশের মানুষ ও অংশীজনদের আশ্বস্ত করতে পারছে না। কারণ, অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সর্বশেষ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার ও সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ এবং ব্যবহারকারীদের হয়রানিমুক্ত রাখাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়। কিন্তু সরকারের এই আইনে এখন গণমাধ্যমকর্মী, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও অধিকারকর্মীরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর আগেও বিভিন্ন সরকারের সময় যেসব আইন হয়েছে, মানুষ তার অপব্যবহার বেশি দেখেছে।
গত ১০ আগস্ট উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগের কথা উঠে এসেছে। তাঁরা বলেছেন, আইন করার আগে সবার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়, সবাইকে আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু আইন পাসের সময়ে বিতর্কিত বিষয়গুলো রেখেই আইন পাস হয়। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বড় উদাহরণ।
জাতিসংঘের ১০ পর্যবেক্ষণ—
খসড়ায় ‘সংবেদনশীল উপাত্ত’-এর সংজ্ঞা খুবই সংকীর্ণ। সংজ্ঞায় জাতি, বর্ণ গোষ্ঠী, রাজনৈতিক মতামত, ট্রেড ইউনিয়নে সদস্য পদ, ধর্মীয় বিশ্বাস বা অন্যান্য বিশ্বাস, যৌনজীবন, যৌনতা সম্পর্কিত তথ্যের মতো বিষয় নেই। ব্যক্তিগত উপাত্তের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত’ হিসেবে যেগুলোকে বিবেচনা করা হয়, তার সঙ্গে এই খসড়া সংগতিপূর্ণ নয়।
খসড়ার ৫ ধারায় বর্ণিত উপাত্ত সুরক্ষার নীতি যথেষ্ট নয়। এ জন্য শক্তিশালী নীতিমালার সুপারিশ করে উদাহরণ হিসেবে জাতিসংঘ কাউন্সিল অব ইউরোপের ‘কনভেনশন ১০৮+’ নমুনা হিসেবে তুলে ধরে।
খসড়া আইনের দশম অধ্যায়ে উপাত্ত মজুত ও স্থানান্তরসংক্রান্ত বিধানের ৪২ ও ৪৩ ধারা (সংশোধিত খসড়ার ৪৪ ও ৪৫ ধারা) মানবাধিকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি নজরদারির ঝুঁকি বাড়াবে। উপাত্ত স্থানান্তরের ধারা উন্মুক্ত ইন্টারনেটের বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।
খসড়া আইনে তিন ধরনের উপাত্ত স্থানীয়করণ বা সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার কোনো উপাত্তকে শ্রেণিবদ্ধ বলে ঘোষণা দিলে তা অনুমোদন ছাড়া স্থানান্তর করা যাবে না।
জাতিসংঘ বলেছে, এই ধারা বলে ব্যবহারকারীর উপাত্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখার অবাধ সুযোগ থাকবে। এই ধারা নাগরিকদের তথ্যের ওপর সরকারের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক তথ্য বিনিময়ে বাধা তৈরি করবে।
জাতিসংঘ ফ্রিডম হাউসের ২০২০ সালের প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে বলেছে, স্থানীয়ভাবে উপাত্ত সংরক্ষণ সুপরিচিত অধিকারকর্মী, সরকারের সমালোচক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতে ব্যবহার করা হয়। কয়েক বছর ধরে সরকারের সমালোচক, সাংবাদিক, অধিকার ও রাজনৈতিক কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে উপাত্ত সংরক্ষণ ধারা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ, ব্যবহারকারী সৃষ্ট উপাত্তে নজরদারি থাকলে ব্যক্তির বিশ্বাস, যৌন সম্পর্কিত তথ্য, সামাজিক বৈষম্য নিয়ে সমালোচনা, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচিতিসহ ব্যক্তিগত অনেক গোপনীয় তথ্য হুমকির মুখে পড়বে। এতে মানুষের মধ্যে ভয় ও স্বনিয়ন্ত্রণ বাড়বে।
প্রস্তাবিত আইনটির দশম ধারায় বলা আছে, সরকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বা অপরাধ প্রতিরোধ, শনাক্ত ও তদন্তের উদ্দেশ্যে উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবে। এসব বিষয়ে ৩৩ নম্বর ধারায় আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এই ধারা বলবৎ হলে বাংলাদেশের ডেটা সেন্টার ও সার্ভারে সংরক্ষিত উপাত্ত নজরদারি আওতায় আসবে। অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাগুলোর গোপন তথ্য প্রকাশে চাপ সৃষ্টি হবে। এই ধারা গণতান্ত্রিক শাসনকে দুর্বল করতে পারে।
খসড়ার ১৩তম অধ্যায় অনুযায়ী, কোনো অভিযোগের অপরাধ দেওয়ানি না ফৌজদারি হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাহী বিভাগ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনকানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, এমন প্রতিষ্ঠান, মালিকানার অংশীদার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক, কর্মচারী বা প্রতিনিধিদেরও দায়বদ্ধ করা যাবে।
এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি ধারায় মামলা শুধু অযৌক্তিকই নয়, এতে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে মামলাজট আরও বাড়বে। এতে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। কারণ, খসড়া আইনে এমন কোনো বিধান নেই, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তদন্ত শেষ ও আদালতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
ফৌজদারি কাঠামো বাদ দিয়ে প্রশাসনিক জরিমানার বিধানের পক্ষে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
খসড়ার ৪ নম্বর ধারায় প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবহার, বিতরণ ও ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান না করে কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এই দেশে কোনো ব্যবসার প্রয়োজনে উপাত্ত প্রক্রিয়া করে, তাদের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য হবে।
এই ধারাকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে জাতিসংঘ বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনও (জিডিপিআর) এত ব্যাপকভাবে আইন প্রণয়ন করেনি।
প্রবাসী কারও উপাত্ত নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আইন প্রয়োগে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এ ছাড়া খসড়ায় বলা আছে, সংবেদনশীল, ব্যবহারকারীর সৃষ্ট এবং শ্রেণিবদ্ধ উপাত্ত স্থানীয়ভাবে মজুত করতে হবে, যা বিদেশি আদালত, আইন প্রয়োগকারীর সংস্থারও এখতিয়ারের বাইরে থাকবে। এ ধরনের বিধান বিদেশি আদালত, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং এখতিয়ারকে সীমিত করে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ–সংক্রান্ত ধারার কারণে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে।
খসড়া আইনের ধারা, সময়ে সময়ে বাধ্যতামূলক নির্দেশ, আচরণবিধি ও আদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি ছাড়াই আইনের বিশদ পরিধি ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়াবে। জাতিসংঘ বলেছে, নতুন এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি থেকে আলাদা হতে হবে।
উপাত্ত সুরক্ষাই আইনের উদ্দেশ্য হতে হবে—নিয়ন্ত্রণ নয়। খসড়ায় এমন কিছু শব্দ আছে, যা সুরক্ষার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণকেই নির্দেশ করে।
সার্বভৌম ডিজিটাল অ্যাজেন্ডা ও উপাত্ত স্থানীয়করণের বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, এ ধরনের আইন অনেক দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ডেটা স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতায় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো প্রথমে কঠোর নীতিতে গিয়েছিল। পরে অর্থনৈতিক উদ্বেগের কারণে তারাও সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। আইনটি সংসদে পেশ করার আগে এর অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করা জরুরি।
জাতিসংঘ বলেছে, একটি শক্তিশালী প্রায়োগিক কাঠামো ও স্বাধীন কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো উপাত্তই সুরক্ষিত থাকবে না।
জাতিসংঘ বলেছে, সরকারের তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে যেন উপাত্ত সুরক্ষা আইন কোনোভাবে সাংঘর্ষিক না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয়ভাবে উপাত্ত সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলে বাংলাদেশে বড় ধরনের ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন পড়বে। সর্বোচ্চ মানের ডেটা সেন্টারের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন পড়বে। এটি বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিনেট ও আই-সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান জাতিসংঘের বেশির ভাগ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, আইনটি যথেষ্ট মতামতের ভিত্তিতে, বিশেষ করে জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত পক্ষগুলোর সঙ্গে কথা বলে প্রণয়ন করলে ভালো হবে। কারণ, খসড়া আইনে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ, কর্মসংস্থান ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
অনন্য রায়হানের মতে, খসড়া আইনে নাগরিকের তথ্যের নিরাপত্তার চেয়ে তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আইনটির পরিধি সীমিত রেখে শুধু নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
খসড়ায় থাকা নানা অসংগতি দূর করতে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও আইনজীবী মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। তিনি বলেন, জাতিসংঘ তাদের মতামতে খসড়া আইনের বেশ কিছু অসংগতি নিয়ে আলোচনা করেছে। যেগুলো বিবেচনা করা হলে জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার মতো মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হবে।
এই দুই বিশেষজ্ঞ যেমনটা আশা করছেন, ঠিক তেমনটি আশা করেন বিভিন্ন অংশীজন ও দেশের সাধারণ মানুষ। তবে অতীতের মতো সরকার যদি বিতর্কিত ধারাগুলো বহাল রাখে, তা কেবল সবাইকে হতাশ করবে।