ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচন

প্রার্থীদের তেমন প্রচারণা নেই, ভোটারদেরও আগ্রহ কম

বিএনপির দলছুট সাত্তারকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার সরাইলে সাত্তারের নির্বাচনী কর্মী সভা থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। এই আসনে বিএনপির দলছুট নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঞাসহ প্রার্থী রয়েছেন মাত্র চারজন। তবে প্রার্থীদের নেই তেমন প্রচারণা ও গণসংযোগ। এমনকি নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রচারপত্রও তেমন চোখে পড়ে না। এই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও নেই তেমন আগ্রহ। তাই এ নির্বাচন অনেকটাই উত্তাপহীন।

এদিকে আবদুস সাত্তারের পক্ষে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতারা প্রকাশ্যে নামলেও ভোটারদের মধ্যে তাঁরা তেমন প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন না। তাঁদের প্রচারণা শুধু দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ও সরকার-দলীয় নেতা-কর্মীরা সাত্তারকে জেতাতে মরিয়া। তাই নির্বাচনের ফল তো সাত্তারের পক্ষেই যাবে, এটা সবাই জানেন। তাই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের তেমন আগ্রহ নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাত্তার ছাড়া অন্য তিন প্রার্থী হলেন আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি (সদ্য বহিষ্কৃত) ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানী ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত সোম ও মঙ্গলবার আশুগঞ্জ এবং সরাইল উপজেলায় সাত্তারের সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে কর্মী সভা হয়। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার সরাইলের কর্মী সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ও দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করা আওয়ামী তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ২০ দিন পর ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এলাকায় আসেন সাত্তার। ২১ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সরাইলে গণসংযোগ চালিয়ে রাতেই ঢাকায় ফিরে যান তিনি। এরপর মঙ্গলবার আবার তিনি এলাকায় আসেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি সরাইলের সদর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে হাজির হন।

নির্বাচনী তেমন আমেজ নেই। তবে কোথাও কোথাও কোনো কোনো প্রার্থীর কিছু পোস্টারের দেখা মিলছে। গতকাল বুধবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ বাজার এলাকায়

সোম ও মঙ্গলবার সরাইল সদর, কালিকচ্ছ, নোয়াগাঁও, চুন্টা ইউনিয়ন এবং আশুগঞ্জ সদর, দুর্গাপুর, তালশহর পশ্চিম, আড়াইসিধা ইউনিয়নে ঘুরে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে নিজ এলাকা হওয়ায় সরাইলের অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নে সাত্তারের পক্ষে নির্বাচনী কিছু তৎপরতা দেখা যায়। তবে প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন, প্রচারপত্রও তেমন চোখে পড়ার মতো ছিল না। প্রার্থীদের পক্ষে সরাইলে তেমন একটা মাইকিংও চোখে পড়েনি। তবে আশুগঞ্জে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং করানো হচ্ছে। জাকের পার্টির প্রার্থী বাদে বাকি তিন প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং হচ্ছে বেশি।

সাত্তার ভূইয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত উপজেলা জিয়া মঞ্চের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য (সদ্য বহিষ্কৃত) এম কামাল হক বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার তাঁরা সাত্তারের পক্ষে প্রচারণার কাজে জোরেশোরে মাঠে নামবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাত্তারের কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন বলেন, নির্বাচনে সরকার যে করেই হোক, সাত্তারকে বিজয়ী করাবে। এ কারণেই সাত্তারের পরিবারের লোকজন অর্থ ব্যয় করছেন না। এ জন্য তাঁরা নির্বাচনে তেমন প্রচারণা চালাচ্ছেন না।

কালিকচ্ছ ইউনিয়নের দিশুতারা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ভোটার আবন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমাকে কোনো জনসভা করতে হলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি নির্বাচন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারা কিছু জানায়নি। তাই শুধু জনসংযোগ করছি। বুধবার সরাইলে জনসংযোগ করেছি। বর্তমানে পুলিশ সহায়তা করছে।’

সাত্তার ভূঞার ছেলে মাঈনুল হাসান ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে লোকজনের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি আছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনিয়ন সদর পর্যায়ে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আজ থেকে গ্রামপর্যায়ে যোগাযোগ করব।’

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এখনো কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। তবে মঙ্গলবার সরাইলে সাত্তারের সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে কর্মী সভায় দুই সংসদ সদস্যের উপস্থিতি আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাঁদের এখানে আসা ও অবস্থান করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’

আশুগঞ্জের ইউএনও এবং উপনির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অরবিন্দ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আচরণবিধি কেউ লঙ্ঘন করেননি। কয়েকটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।